প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে তুষারের মনোনয়ন বাণিজ্যে
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্কের মিথ্যা কথা বলে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ২০০-৩০০ কোটি টাকাই চাইতেন তিনি। এ ছাড়া নানা প্রতারণা করে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আবু হানিফ ওরফে তুষার ওরফে হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর প্রতারণায় ব্যবহৃত একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলেছে, একটি প্রতারক চক্রের মূল হোতা হানিফ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।হানিফের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হানিফ দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ও সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চেয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হানিফ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন কৌশল অবলম্বন করতেন।
র্যাব পরিচালক বলেন, হানিফ দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বেনামি মুঠোফোন নম্বর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে মুঠোফোনে সেভ করতেন। সেই নম্বরে নিজের চক্রের সদস্যদের সঙ্গে খুদে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। তাতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, পদোন্নতিসহ নানা বার্তা থাকত, যেগুলো দেখিয়ে লোকজনের আস্থা অর্জন করত চক্রটি। এ ছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ছবি সম্পাদন করে বসাতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, হানিফ বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদের নিশানা করতেন। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষেত্র বিশেষে দামি গাড়ি করে নামীদামি হোটেলে নিশানা করা ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। সেখানে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০০-৩০০ কোটি টাকা চাইতেন। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। হানিফ প্রতারণা করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটির বেশি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
র্যাব জানায়, আবু হানিফ এইচএসসি পাস হলেও তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে বলে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। তিনি ২০০৮ সালে মোটর পার্টসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। পরিবহন সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তাঁর বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে। ২০১৪ সালের পর তিনি একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল জমি ও সম্পত্তির মালিক হন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক–সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে।