• বুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রতিশোধ নিলে বিএনপি জামায়াতের অস্তিত্ব থাকত না’


প্রকাশিত: ৭:৩৬ পিএম, ২ জুলাই ২৩ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৬ বার

স্টাফ রিপোর্টার : জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আজ রোববার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিশোধ যদি নিতে যেতাম তাহলে ওই বিএনপি বা জামায়াতের অস্তিত্বও থাকত না। যেটা বাস্তবতা। ওরা কী করেছে? এই বিএনপি ক্ষমতায়…জিয়াউর রহমান আসার পরে তো আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, খুন; সেনা বাহিনী-বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে কেউ বাদ যায়নি। হাজার হাজার সেনা অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসারকে হত্যা করেছে। সৈনিকদের হত্যা করেছে। আমাদের টুঙ্গিপাড়ার লুৎফরসহ অনেকে এভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। পরিবারগুলো লাশও পায়নি, আপনজনকেও পায়নি। আমিই তো আমার বাবা-মা, ভাই কারো তো লাশও দেখতে পারিনি।

তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় এনে আমার বাবাকে সমাধিস্থ করেছিল একটি কারণে, এখানে সমাধিস্থ করেছে ভেবেছিল টুঙ্গিপাড়ায় আর কেউ কোনো দিন আসতে পারবে না। ইতিহাস থেকে নামটা মুছে দিয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে একে একে সবই আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আজ জয় বাংলা স্লোগান উচ্চ আদালতের রায়ে আমাদের জাতীয় স্লোগান। জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ এখন বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্ক কর্তৃক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ; যে ভাষণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করে।শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ২১ বছর পর্যন্ত যেভাবে করেছিল, আজকে বাংলাদেশ বদলে গেছে যখন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এলেই দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরে। এই টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে মানুষ তো একবেলা খাবার জুটাতে পারত না। আল্লাহর রহমতে এখন তো আর সে অবস্থা নাই।

আমরা যে প্রোগ্রাম নিয়েছিলাম, আমার গ্রাম, আমার শহর’—টুঙ্গিপাড়া তো বলতে গেলে আমার শহরই হয়ে গেছে। কোটালীপাড়াসহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলে গেলে দেখা যাবে শতভাগ বিদ্যুৎ, আমরা ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে গিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। কালকে আসতে আসতে দেখলাম, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রত্যেকের হাতেই মোবাইল ফোন—ছবি তুলছে। যারা ছবি তুলছে তাদেরও কিছু ছবি আমি তুলে রেখেছি। কারণ এটাও আমার কাছে দেখার বিষয় ছিল,’ বলেন তিনি।

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে জনগণের সম্পৃক্ততা দরকার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে তো করেছেই, এরশাদের আমলেও কম যায়নি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৯১ সালের কথা মনে আছে, সমস্ত মন্দিরগুলো ভেঙে দিলো। হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার। আবার ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আর মুসলমান; কেউই বাদ যায়নি ওদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে। মানুষকে গুলি করে মারা। হাত-পায়ের হাড় হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করে মারা, চোখ তুলে নেওয়া, হাত কেটে নেওয়া। এমন সন্ত্রাসী কাজ নাই এই বিএনপি না করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটা তো এ দেশের মানুষ দেখেছে। তারা দেশের কোনো উন্নতি না, নিজেরা অর্থ-সম্পদশালী হয়েছে, বিদেশে পাচার করেছে। খালেদা জিয়ার ছেলেদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, মানুষ খুন করা, ভোট চুরি করা, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করা—এই সমস্ত অপকর্ম করে গেছে। ২০০১-এ ক্ষমতায় আসার পরই তাদের তাণ্ডব আমরা দেখেছি। এরপর আবার ২০১৩ সালে তাদের অগ্নি সন্ত্রাস।

ক্ষমতা বিএনপির অর্থ বানানোর মেশিন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এই বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে।তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা গ্রুপ আছে তারা সব সময় নানা তথ্য দিয়ে থাকে। এরা কখনো গ্রামে যায়নি বা গ্রামের মানুষের অবস্থাও দেখে না। আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি আর অনেকগুলো প্রাইভেট টেলিভিশন, ৪৪টার মতো। এই প্রাইভেট টেলিভিশন; সেখানে গিয়ে টক শো করবে আর আমাদের দেওয়া টেলিভিশন, আমাদের দেওয়া বিদ্যুৎ, আমাদের দেওয়া ডিজিটাল পদ্ধতি সেটাই ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিবত গায়। এটা তাদের চরিত্র। তবে মিথ্যা বেশি দিন টেকে না। সত্যের জয় হয়, সত্যের জয় হবেই। এটাই হলো বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো। সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক সেটা আমরা চাই না। সেটা আমরা বরদাস্ত করব না। বাংলাদেশের কিছু মানুষ আছে কথায় কথায় নালিশ করে, নালিশ করে কী হয়? কথায় আছে না—”নালিশ করে বালিশ পাবে, ভাঙ্গা জুতার বাড়ি খাবে”। ওরা কিন্তু ওটাই পাওয়ার যোগ্য।যাদের নিজের মাটিতে খুঁটিতে জোর থাকে না, নিজের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না। দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। তারাই গিয়ে বিদেশে গুজুর-গুজুর, ফুসুর-ফুসুর আর নালিশ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বেড়ানো, ওটা করে বেড়ায়,’ বলেন তিনি।