বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:
পোষাক রপ্তানীতে উৎসে কর ১ % বাড়লে বস্ত্র খাতের বারোটা বাজবে বলে অভিমত দিয়েছেন পোষাক খাতের ব্যবসায়ীরা।তাঁরা জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, উৎসে কর শুন্য দশমিক ৩ শতাংশ থাকতেই আমাদের হিমসিম থেকে হয়েছে ইন্ড্রাষ্ট্রি চালাতে।তার ওপর এবার এক লাভে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে জাতীয় বাজেটে। এটা বাতিল না করা হলে বস্ত্র খাতের বারোটা বাজবে।
বাজেটে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর হার বাড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে। প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে সামগ্রিকভাবে তাঁদের অভিমত, ‘বাজেট বস্ত্রখাত বান্ধব হয়নি’।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের সংগঠনের নেতারা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বাজেটে পোশাক খাতের রপ্তানিতে উৎসে করহার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ এবং পোশাক খাতের সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
তবে উৎসে কর নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছে সিপিডি। সকালে ঘোষিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) উৎসে কর বাড়ানোর সরকারের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে উৎসে কর হার কমানো হয়েছিল। নতুন অর্থবছরে সেটি আগের চেয়ে সামান্য বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার পরিকল্পনাটি ঠিক আছে।
পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে উৎসে কর হার কমানোর দাবির পেছনে যুক্তি হিসেবে আতিকুল ইসলাম বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানার সংস্কার কার্যক্রম চলছে। এতে উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। আবার গত এক বছর ধরে ডলারের বিপরীতে ইউরোর অবমূল্যায়ন চলছে। এর অর্থ তাঁদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে উৎসে করহার ১ শতাংশ করা হলে তা শিল্পের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে না। নিট ও ওভেন পোশাক খাতে নতুন করে ঝুঁকি বাড়বে। তাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা টিকতে পারব না।’
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের কাপড় ও পোশাকশিল্প নানা ধরনের সুযোগসুবিধা উপভোগ করছে।’ এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়েছি ঠিকই, তবে অর্থনীতিকেও অনেক কিছু দিয়েছি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। দিয়েছি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, দিয়েছি ফরোয়ার্ড লিংকেজ। আমরা ৪৪ লাখ শ্রমিক ভাইবোনের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছি।’
উৎসে কর কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করা হলে আরও অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন বিজিএমইএর সভাপতি।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যন্ত্রপাতি আমদানিতে প্রথমবারের মতো ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি কমানোর দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এখন আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে তা উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী, বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, বিজিএপিএমইএর সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বর্তমান সহসভাপতি এস এম মান্নান, সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহসভাপতি আসলাম সানি প্রমুখ।
তৈরি পোশাক ছাড়াও হিমায়িত খাদ্য, পাট, চামড়া, সবজি ও প্যাকেটজাত খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হার বাড়িয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে।