পুলিশ রাজনীতিক ঐক্যে জমজমাট ফুট চাঁদাবাজি
লাবণ্য চৌধুরী : জমে উঠেছে ঈদ চাঁদাবাজি। যদিও অনেক আগে থেকেই ফুট চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশ ও রাজনীতিকদের দেয়া চাঁদায় রাস্তা ফুটপাত চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঢাকার নিউ মার্কেটের চারদিকে এমনভাবে হকার বসেছে যে দেখে বোঝার উপায়ই নেই- এটি প্রধান সড়ক। এমন অবস্থা শুধু গুলিস্তান বা নিউ মার্কেটেই না। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, উত্তরাসহ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়ক ও ফুটপাতই দখল করেছে হকাররা। এর জন্য মোটা অংকের চাঁদাও দিতে হচ্ছে তাদের। আর ঈদ এলে বাড়ে দোকানের পরিসরও। চাঁদাও ওঠে মোটা অংকের।
চাঁদাবাজীকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কের ফুটপাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে লাইনম্যান। এরা বছরের পর বছর টাকা তোলে হকারদের কাছ থেকে। টাকার ভাগ চলে যায় ওপরের সব মহলে।আর এভাবে ফুটপাত থেকে রাজধানীর সর্বত্র কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে সব মহলকে খুশী রেখে। একটি সূত্রে মতে, বছরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। কেবল ফুটপাতই না, অনেক এলাকার সড়ক দখল করেও দোকান বসিয়ে চলছে চাঁদাবাজি।
সরেজমিনে ভুক্তভোগীরা বলছেন, বলছেন, এই চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন কতিপয় পুলিশ, রাজনীতিবিদরা। বছরের পর বছর প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির পরও এটি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি কর্তৃপক্ষ।রাজধানীর গুলিস্তানের ফুটপাত। প্রকাশ্যে তোলা হচ্ছে চাঁদা। আর এই চাঁদা তোলার জন্য রয়েছে লাইনম্যানও। সড়কের বেশিরভাগ অংশই হকারদের দখলে। সরকারি কোনো কোনো রাস্তা ভাড়া দেওয়া হয়েছে হকারদের কাছে। কিন্তু সরকারি রাস্তা ভাড়া দিল কে বা কারা? বছরের পর বছর চাঁদা দিলেও মুখ খুলতে নারাজ হকাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে হকার্স ফেডারেশনে হকার আছে প্রায় ৩ লাখ। এরা প্রতিদিন গড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা করে চাঁদা দিচ্ছে । এ হিসাবে প্রতিদিন চাঁদা ওঠে ৯ কোটি, মাসে এর পরিমাণ ২৭০ কোটি, আর বছরে তা দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।এখানেই শেষ না, জনগণের হাটার জন্য নির্মাণ করা ফুটপাতে পজিশন নিতেও একেকজনকে গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, কে কোন এলাকার চাঁদাবাজ বা লাইনম্যান তার সবই জানে পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের তালিকাও আছে থানায়। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা জানা গেছে, ফুটপাত থেকে বছরে চাঁদাবাজি হয় ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা। তারাও জানাচ্ছেন, ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদার টাকার বড় অংশই যায় পুলিশের পকেটে। পুরো ব্যবস্থাপনার পেছনে আছে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। যদিও পুলিশের দাবি, ফুটপাতের চাঁদাবাজি হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। ফুটপাত দখলের দায় সিটি করপোরেশনের।প্রতি বছর রাজধানীর ফুটপাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হলেও অনেকটা নিরব প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের মত, সমস্যা সমাধানে, হকারদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়াকে বৈধভাবে পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই ফিরবে শৃঙ্খলা, বন্ধ হবে হয়রানিও।