• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

পিএসসির প্রশ্নচোর সিআইডির জালে


প্রকাশিত: ৯:৪০ পিএম, ৮ জুলাই ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৩ বার

 

শত ক্রোড়পতি ১৭ সিন্ডিকেটের প্রশ্ন ফাঁস চক্র-

 

 

শফিক রহমান : অবশেষে পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ১৭ সিন্ডিকেট ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। সোমবার (৮ জুলাই) অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত এক মাস ধরে সরকারি কর্ম কমিশনের প্রশ্নফাঁসের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচিত হয়ে ওঠেন পিএসসির সাবেকগাড়ি চালক আবেদ আলী। চক্রটি বিপিএসসির একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করেছে। এই চক্রটির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে বহু অযোগ্য প্রার্থী। ফলে প্রজাতন্ত্রের কাজে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগের যে উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান, সেটিই এখন হুমকির মুখে।

প্রশ্নফাঁস সম্পর্কে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, কমিশন সবকিছু খতিয়ে দেখছে। তারা পিএসসির ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনা প্রমাণ হলে, কমিশন বিবেচনা করবে, পরীক্ষা থাকবে কি, থাকবে না। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শুরুতে তিনি বিষয়টিকে গুজব মনে করলেও পরে বিব্রত হয়ে এর সত্যতা স্বীকার করেন সোহরাব হোসাইন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চক্রের বেশ কয়েকজন আটক হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ শুরু হয়। এরপর অনুসন্দানে মিলে বিপিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম এর নাম। গোপনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটসার সত্যতা স্বীকার করে এক ‘উপপরিচালক এর নাম ফাঁস করে দায় এড়াতে চান। এই উপ পরিচালক হচ্ছেন মোহাম্মদ আবু জাফর। এই আবু জাফর ২ কোটি টাকার বিনিময়ে টাঙ্ক থেকে তাকে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।সাজেদুল জানান, তিনি অবগত আছেন ৪৫তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে।

যাহোক পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির ২ উপপরিচালক ও গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।অনুসন্ধানে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে এই গাড়ি চালকের নাম আসার পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সন্ধান মেলে আবেদ আলীর অঢেল সম্পদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৈয়দ আবেদ আলীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায়, রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দান খয়রাত ও পরহেজগারির নানা খবর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তার বিপুল বিত্তবৈভবের খবর। ঢাকায় ও গ্রামে একাধিক বাড়ি, গরুর খামার ও সম্পদের তথ্য মিলেছে তারই ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিত্তবৈভব বানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবেদ আলী। আবেদ আলী সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও উঠবস করতেন তিনি। গত ১৮ মে তারিখে প্রকাশিত একটি পোস্টে পিএসসি-এর চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী লিখেছেন: ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’

একটি বেসরকারি গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক তদন্তে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার একটি চক্র উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত।অভিযুক্তদের একজন সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন। তিনি পিএসসি-এর চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক ছিলেন।

গাড়িচালক হলেও মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন ইতিমধ্যে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা আবেদ আলীর বিশাল সম্পদের বিষয়টি তুলে ধরে অভিযোগ করেন, তিনি ঢাকায় দুটি বহুতল ভবন এবং মাদারীপুরে একটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিক।

যদিও এসব দাবির সত্যতা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি, তবে আবেদ আলীর নামে একটি ফেসবুক পেজে তার মালিকানাধীন একটি হোটেল সম্পর্কে পোস্ট করা হয়েছে।
১৮ মে তারিখে প্রকাশিত একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন: ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন।ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সিয়াম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দামি গাড়ি ব্যবহার করেন এবং বিদেশে পড়াশোনা করেছেন।
সোহানুর রহমান সিয়াম দুটি গাড়ির ছবি পোস্ট করেছেন। সেগুলোর মালিক তিনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব গাড়ির একটির মূল্য আনুমানিক ৭০ লাখ টাকা এবং অন্যটির দাম ৪০ লাখ টাকা। তবে গাড়িগুলো তার কি না বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।

সিয়াম তার বাবা আবেদ আলীর একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন: আব্বু কুয়াকাটা গিয়েছিলো একটা ব্যবসায়িক সফরে, সেখানে স্থানীয় এক ছোট ভাই ছবিটি তুলে ইনবক্সে দিলো। সাধারণত আব্বু কোন ওয়াক্তের নামাজ অবহেলা করে না, যখন যেখানে থাকে তখন সেখানেই পাক-পবিত্র জায়গা খুঁজে নামাজ আদায় করে নেয়। খুব সম্ভবত সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এখন প্রশ্ন করছেন, কীভাবে একজন গাড়িচালক এত সম্পদ অর্জন করতে পারেন।