• মঙ্গলবার , ২১ মে ২০২৪

পাকা জঙ্গি সন্ত্রাসী করিমের আন্ডারওয়ার্ল্ড নানা মিশন


প্রকাশিত: ১০:১৩ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬ বার

এস রহমান   :  পাকা জঙ্গি সন্ত্রাসী করিমের গোপন অধ্যায় নিয়ে তোলপাড় চলছে। করিমের চাতুরীপনায় যেন হার মানছে 11গোয়েন্দারাও। ইতিমধ্যে তার একাধিক পরিচয় মিলছে। কিন্তু খোঁজ খবর নেয়ার পর তা উল্টো হচ্ছে!এ যেন পাকা খেলোয়াড়ের মত?

গোয়েন্দারা জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, রাজধানীর আজিমপুরে নিহত জঙ্গির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তার সাংগঠনিক নাম আব্দুল করিম ঠিক থাকলেও প্রকৃত নাম নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। তার আরেক নাম জামশেদ।

আজিমপুরের ওই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে জানা যায়, তার নাম জমশের উদ্দিন।সেখানে পিতার নাম মোসলেহ উদ্দিন ও স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন মেহেরচন্ডী বলে উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু খোঁজ খবর নেয়ার পর উল্টারুপ নেয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, বাসা থেকে উদ্ধার করা জাতীয় পরিচয়পত্রটি ভুয়া বলে মনে হচ্ছে। তার অপর একটি পরিচয় পাওয়া গেছে।তিনি আসলে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন তিনি। তার প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়।চলতি বছরেই সে ব্যাংকের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান ছানোয়ার হোসেন বলেন,‘নিহত ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। সরকারি ছুটির কারণে হাতের আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখতে একটু সময় লাগছে।হাতের আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখলেই সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে।’

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সূত্রগুলো বলছে, তানভীর ওরফে জমশের ওরফে করিম নব্য জেএমবি’র মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিল। সে মূলত সংগঠনের আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করতো।একই সঙ্গে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতো। পরিবারের আড়ালে সে নব্য ধারার জঙ্গিদের আশ্রয় ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তানভীর ওরফে জমশের ওরফে জামশেদ ওরফে করিমের জমজ দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের এক সন্তানের কোনও হদিস না পেলেও আরেক সন্তান বর্তমান ডিএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ছেলেটি ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের লেভেল এইট-এর ছাত্র।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘নিহত করিম তার পরিবারকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে সন্তানদেরও একই দীক্ষায় দীক্ষিত করার চেষ্টা করছিল। যে ছেলেটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে,তার কথাবার্তায়ও মোটিভেটেড হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।’

সূত্র জানায়, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিলো যে, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করছে। একারণে তারা সংশ্লিষ্ট ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া সব কর্মকর্তার তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘গুলশান হামলার পর এই করিমের সম্পর্কে তথ্য পান তারা।করিম নিজ নামে বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল, যেখানে গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা সর্বশেষ অবস্থানের পর অপারেশন চালায়। হামলার পরদিন করিম তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ওই বাসা ছেড়ে চলে যায়।’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, করিম বসুন্ধরার ওই বাসা ছেড়ে কিছুদিন মিরপুর এলাকায় অবস্থান করে। এরপর কল্যাণপুরেও অবস্থান করে। গত ১ আগস্ট তারা আজিমপুরের ওই বাসায় ওঠে।

সূত্র বলছে, আজিমপুরের বাসায় ওঠার সময় সে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে। সেখানে নিজেকে জমসের পরিচয় দেয়। ভাড়াটিয়া ফরমের সঙ্গে দেওয়ার জন্য সে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেছিল।

গত ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের একটি বাসায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।সেখানে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এক মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ নামে এক জঙ্গি নিহত হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গি অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পরদিন জাহিদ ওরফে মুরাদ স্ত্রীসহ রূপনগরের বাসা ছেড়ে যায়।

এরপর জাহিদ ওই বাসায় ২ সেপ্টেম্বর ফিরে এলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলিতে  নিহত হয়। তবে  তার স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা দুই সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে ছিল। এই জেবুন্নাহার শীলাকে ধরতে গিয়েই আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যদিও অভিযানের তিন ঘণ্টা আগে জেবুন্নাহার ছোট সন্তানকে নিয়ে বাসার বাইরে চলে যায়। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।