• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

পলায়নে নিষেধাজ্ঞা মতিউরদের


প্রকাশিত: ১১:৩৮ পিএম, ২৪ জুন ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৪ বার

ওয়ান্টেড ছাগলকান্ড’র গডফাদাররা-

বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে ওয়ান্টেড হলেন ছাগলকান্ডের গডফাদাররা। ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশ থেকে পলায়নে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের যাতে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের বিশেষ পিপি মীর আহাম্মদ আলী সালাম। শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন।

দুদক উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, জারি হওয়া আদেশটি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে বিশেষ শাখা থেকে এ আদেশ দেশের সব বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরে পাঠানো হবে।আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হুন্ডি ও আন্ডারইনভয়েসিং, ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, মতিউর রহমান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।

ছেলের ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় সমালোচিত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানে বিশেষ টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই টিম রোববার থেকেই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সচিব বলেন, দুদকের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার।

দুদক সচিব আরও বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৪ জুন কমিশন একটি অনুসন্ধান টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যরা তাদের কাজও শুরু করেছেন।

এনবিআর সদস্য ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত দুই যুগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ পৃথকভাবে অনুসন্ধান করে দুদক। প্রতিবারই দুদক থেকে অব্যাহতি পান তিনি। তবে ওইসব অভিযোগ প্রাতিষ্ঠানিক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ছিল বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ পঞ্চম দফায় তার বিরুদ্ধে ৩১ বছরের চাকরি জীবনে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে। এ অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নতুন একটি অনুসন্ধান শুরু করল দুদক।

এদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থের মালিক হওয়ার খবরে মতিউর রহমানকে নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর তাকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) শুল্ক -১ শাখার উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশে মতিউর রহমানকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতির পদ থেকে সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরপি) সংযুক্ত করা হয়।

একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রোববার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় তিনি যোগ দেননি। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী জানান, মতিউর রহমান আর কখনও সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় আসবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের পোস্ট করা ভিডিওতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য ৩৭ লাখ টাকায় একটি গরু এবং ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার তথ্য উঠে আসে। এ খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। এ যুবক এত টাকা কোথায় পেলেন? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে একের পর এক আলোচনার ঝড় ওঠে এবং একপর্যায়ে খবরের কেন্দ্রে চলে আসেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মতিউর রহমান। এরপর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এ ছাড়া রিসোর্ট, আলিশান বাড়ি-গাড়ি ছাড়াও ডজন খানেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগেরও তথ্য-উপাত্ত উঠে আসছে।