• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পরকীয়া গুরুদন্ডে সাকলায়েন


প্রকাশিত: ৭:১৪ পিএম, ২৫ জুন ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৫ বার

পরীর গ্যাড়াকলে চাকরী যাচ্ছে সেই এডিসি সাকলায়েনের-

 

শফিক রহমান : নায়িকা পরীমনির গ্যাড়াকলে পড়ে পরকীয়ার গুরুতর অভিযোগে শেষমেষ চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশের সাবেক এডিসি সাকলায়েন। পুলিশের তদন্তে তাকে (সাকলায়েনকে) ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তদন্তে সাকলায়েনের পরকীয়া, নায়িকার সঙ্গে অবৈধ রাত্রিযাপনের প্রমাণও মিলেছে।

তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চেয়েছে তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে, নায়িকা পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে থাকতেন। সাকলায়েনের স্ত্রী তাঁর (সাকলায়েন) সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনি গিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে তাঁকে ফোন করা হয়, খুদে বার্তা পাঠানো হয়, কিন্তু সাকলায়েন কোনো সাড়া দেননি।

ওদিকে পরীমনি গনমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আসে নাই, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যদি আসে তখন আমি কথা বলব। এখন মনে হয় না আমার কোনো কথা বলার দরকার আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে তাঁর দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন।

তদন্ত সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা (বৈধ আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা) থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মুঠোফোনের সিডিআর (বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন) বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।

নায়িকা পরীমনির মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন, পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের কথোপকথন চলত। তা সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ রয়েছে। এর ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তাঁর স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমনি তাঁর (সাকলায়েন) রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ আগস্ট (২০২১) রাত দেড়টায় পরীমনি বাসাটি ত্যাগ করেন।

সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। এতে বলা হয়, সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। এরপরও পরীমনির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদ্‌যাপন এবং নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ঠ সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাঁকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন। তবে জবাব সন্তোষজনক হয়নি।

এর আগে ২০২১ সালের ৯ জুন রাতে সাভার থানার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পরীমনি। সেই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন। পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।

পরীমনির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নাসির উদ্দিন মাহমুদ হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে তাঁকে বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় তিন দফায় মোট সাত দিন তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেপ্তারের ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরীমনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন