• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

পদযাত্রা শান্তি সমাবেশ নিয়ে রণক্ষেত্র ফেনী লক্ষ্মীপুর


প্রকাশিত: ৯:৩৩ পিএম, ১৮ জুলাই ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৪ বার

বিশেষ প্রতিনিধি / লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি/ফেনী প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। তিনি যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে লক্ষ্মীপুরে মদিন উল্যাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার দোতলার সিঁড়ির পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগে বিকেলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জেলা কৃষক দলের সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ও সদর (পূর্ব) উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বাবু জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রথমে কলেজ রোড এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এরপর রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর গুলি ছুড়তে থাকে। এতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন বলেন, হাসপাতালে আহত অবস্থায় অনেক রোগী এসেছে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধও রয়েছেন কয়েকজন।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের লোকজনের উপর বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা করেছে। পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যুবদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আয়োজনে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন।

পদযাত্রা-শান্তি সমাবেশে ফেনী রণক্ষেত্র

ফেনী প্রতিনিধি জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফেনীতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় চলা এই সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

এই ঘটনার জন্য বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ একে অপরকে দায়ী করেছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে ফেনী শহরের ইসলামপুর রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে সংঘর্ষে যোগ দেয় আওয়ামী লীগও। দফায় দফায় চলা এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে শহরের প্রবেশ পথের দাউদপুর এলাকা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ভিপি জয়নালের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু করে জেলা বিএনপি। পদযাত্রাটি শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খেঁজুর চত্ত্বর হয়ে ইসলামপুর রেডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছায়। সেখানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এতে ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ। একই সময় দোয়েল চত্ত্বর এলাকায় শহিদ মিনারের সামনে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ করছিল আওয়ামী লীগ। কাছেই চলা বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে এক পর্যায়ে জড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। ত্রিমুখী এই সংঘর্ষে শহরে তৈরি হয় রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। কিন্তু কিছু সময় পর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের কাছে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ। এ সময় শহরের ট্রাংক রোডের ফেনী প্রেসক্লাবেও ভাঙচুর চালানো হয়। আহত হন উপয় পক্ষের নেতাকর্মীসহ সংবাদকর্মী ও পুলিশ।

এ ঘটনায় ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ উদ্দিন বাহার অভিযোগ করে বলেন, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রাটি ইসলামপুর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিত হামলা করে। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের জখম করে।আহতদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপির নেতাকর্মী বলে দাবী করে তিনি জানান, আহতদের বিভিন্ন বেসরাকরি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন শীল এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বলেন, পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে সহয়তা করতে গিয়ে হামলার স্বীকার হয়েছে। একই সময় বিএনপির নেতাকার্মীরা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশেও হামলা করেছে।

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।রিপোট লেখা পযন্ত শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ টহল দিতে দেখা গেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকমীদেরকেও স্ব স্ব এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।