• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা কব্জায় ডিসিদের দৌড়ঝাঁপ


প্রকাশিত: ৩:৪৪ এএম, ২ জুলাই ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৭ বার

Medea-1শফিক আজিজি: ঢাকা:  এবার পত্রিকা ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা নিতে ডিসিরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ ওই আইনটি বাতিল করে ছিলেন। আগামী সপ্তাহে ডিসি সম্মেলনে পত্রিকা ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা ডিসিরা পুনরায় কব্জার উদ্যোগ নিয়েছে ।এলক্ষ্যে তাঁরা ইতিমধ্যে অনেক দূরও এগিয়েছেন।

সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করতে প্রকাশনা আইনের একটি বিতর্কিত ধারা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি দুই দফা বৈঠকও করেছেন।

 প্রশাসন সূত্র বলছে, রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে, এমন বিষয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে পত্রিকা বাতিলের কোনো বিধান এখন নেই। এ জন্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর একটি ধারা পুনরুজ্জীবিত করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল-সংক্রান্ত এই ধারাটি দেশের সংবাদপত্রশিল্পে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ছিল। এই ধারাবলে ১৯৭৪ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হতো। সংবাদপত্রসেবীরা এই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও কোনো দলীয় সরকার তা আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিন্দিত এই ধারাটি বাতিল করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী  বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের ধারা স্থগিত করা হয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী কিছু করবেন না—এই অঙ্গীকার করেই তো প্রকাশক পত্রিকার ডিক্লারেশন নেন। কেউ এর অপব্যবহার করলে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিদ্যমান আইনে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানেও শর্ত লঙ্ঘন করায় আইনি প্রক্রিয়ায় পত্রিকা বন্ধ করা হচ্ছে।

amardeshতিনি মনে করেন, নির্বাহী আদেশে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের সুযোগ থাকলে অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। তাই কেউ শর্ত না মানলে বিদ্যমান আইনেই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে প্রকাশনা বাতিল করতে হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মরতুজা আহমদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি কমিটি তথ্য ও প্রকাশনাবিষয়ক আইনগুলো সময়োপযোগী করতে পর্যালোচনা শুরু করছে। ওই কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় করণীয় ঠিক করবে।

১৯৭৩ সালের প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইন পুনরুজ্জীবিত করা হবে কি না, জানতে চাইলে তথ্যসচিব সরাসরি এর জবাব দেননি। তিনি বলেন, কমিটি সুপারিশ করার পর মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এবং অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে আলোচনা করবে।

আইনের বিতর্কিত ধারাটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন। গতকাল তিনি বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার ডিক্লারেশন দেন। অথচ সংগত কারণ থাকলেও ডিক্লারেশন বাতিল করতে পারেন না। এমনকি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করলেও এখন আইন অনুযায়ী পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা যায় না। এর ফলে কিছু পত্রিকা যাচ্ছেতাই খবর প্রকাশ করছে। নিকট অতীতে এ ধরনের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

এই জেলা প্রশাসক সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব পদে যোগ দিয়েছেন। তাঁর মতে, ১৯৭৩ সালের আইনের একটি ধারা পুনরুজ্জীবিত এবং সাহাবুদ্দীন আহমদ সরকারের সংশোধনীটি বাতিল করলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করতে পারবেন।

কিন্তু এভাবে নির্বাহী আদেশে সংবাদপত্র বন্ধের উদ্যোগ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়া​র। তিনি বলেছেন, এটা সংবাদপত্রের মৌলিক স্বাধীনতার পরিপন্থী। দীর্ঘ আন্দোলনের পর নির্বাহী আদেশে সংবাদপত্র বন্ধের সিদ্ধান্ত রহিত করা হয়। সেটি ফিরে আসুক, এটি এই জগতের কারোরই কাম্য নয়।

প্রস্তাবটি করা হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন সামনে রেখে। ৮ থেকে ১০ জুলাই অনুষ্ঠেয় জেলা প্রশাসক সম্মেলনে উত্থাপনের জন্য পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল প্রসঙ্গ ছাড়া আরও তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পত্রিকার প্রকাশক মারা গেলে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য সংবাদপত্রশিল্পের অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রকাশক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি আইনে উল্লেখ নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশকের অবর্তমানে পরিবারের কেউ প্রকাশক হতে চাইলে সংবাদপত্রশিল্পে তাঁর তিন বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, এখন সংবাদপত্র কিংবা ছাপাখানার লাইসেন্স নবায়ন করতে হয় না। প্রতি তিন বছর পর পাঁচ হাজার টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা উচিত।

এ ছাড়া সরকারি ঘোষণাপত্রের ফি দৈনিক পত্রিকার জন্য ৫০ হাজার টাকা, সাপ্তাহিক পত্রিকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য পত্রিকার জন্য ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন যেকোনো পত্রিকার ঘোষণাপত্র ফি চার টাকা।