• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘পণ্যের ব্র্যান্ডিং করে বাণিজ্য বাড়াতে হবে’


প্রকাশিত: ৯:৫৫ পিএম, ৯ জানুয়ারী ১৯ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৪ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং করে বাণিজ্য বাড়াতে হবে।বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এ জন্য দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন বাজার সৃষ্টি ও পণ্যের বহুমুখীকরণেও মনোযোগী হতে হবে।উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মানোন্নয়ন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগী হতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, নিজস্ব ব্র্যান্ডে রফতানি করা সম্ভব হলে রফতানির পরিমাণ বাড়বে। একইসঙ্গে এ খাত থেকে পাওয়া সুবিধাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।বুধবার ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বক্তব্য দেন। পরে রাষ্ট্রপতি মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

অনুষ্ঠানে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তখন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রবর্তিত অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকারের সুবিধা থাকবে না। তাছাড়া বিভিন্ন অশুল্ক্ক বাধাও অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এরূপ পরিস্থিতিতে উৎপাদক ও রফতানিকারকদের তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সামর্থ্য ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি উন্নত ও টেকসই অর্থনীতি বিনির্মাণে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। রফতানি ঝুড়িতে অনেক পণ্য সংযোজিত হলেও এখনও তা প্রধান কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশজ কাঁচামালনির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনে আরও মনোনিবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে পাটভিত্তিক বহুমুখী পণ্য, খাদ্যসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, আম ও আলু পণ্যের রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।শ্রমঘন আইসিটি খাতকে শুধু দেশের উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে আইসিটি-সংশ্নিষ্ট সেবা খাতের রফতানি বাড়াতে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

আবদুল হামিদ বলেন, নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলে ব্যবসায়ের ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তুলনামূলক সুবিধা ও স্থানীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়বে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।মাসব্যাপী এ মেলা আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। মেলায় প্রায় ৫৫০টি স্টল ও প্যাভিলিয়নে দেশি-বিদেশি পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পরপরই মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় জমে। এবার মেলায় প্রবেশের টিকিট ৩০ টাকা ও শিশুদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার কাজ করছে। সব ক্ষেত্রে ব্যবসা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মেলা ব্যবসা সম্প্রসারণের ইতিবাচক দিক। এ মেলার মাধ্যমে পণ্যের স্থানীয় বাজারের প্রসার ঘটছে। পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে রফতানি বাড়বে। বিশেষ করে রাশিয়ার বাজার ধরতে পারলে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বছরব্যাপী পণ্য প্রদর্শনের জন্য ২০২০ সালে বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলের স্থায়ী প্রাঙ্গণে শুরু হবে।বাণিজ্য সচিব বলেন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পণ্যের মানোন্নয়ন প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা ও শিল্প গড়ে তুলতে হবে। মেলার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার হচ্ছে এবং দেশি পণ্যের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাণিজ্য মেলার একটি স্টলের বিপরীতে ২০টি আবেদন পড়ছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো স্টল দেওয়া কষ্টসাধ্য হচ্ছে। মেলার স্থায়ী প্রাঙ্গণ চালু হলে আরও বেশি স্টল বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে। বিদেশে এরকম প্রদর্শনী কেন্দ্র ১০০ থেকে ২০০ একর জমি জুড়ে স্থাপন করা হয়। এ দেশে জমির স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব না হলেও নূ্যনতম ৩০ একর জমিতে স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, রফতানি বাণিজ্য প্রসারে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। নতুন রফতানি গন্তব্য রাশিয়ার বাজার ধরতে আরও জোর দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী দিনের লক্ষ্য পণ্যের মানোন্নয়ন ও উৎপাদশীলতা বৃদ্ধি করা। সে লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছে দেশি কোম্পানি। এই প্রতিযোগিতায় দেশি পণ্যের মানোন্নয়ন হচ্ছে। মেলায় দেশি পণ্যের ব্র্যান্ডিং হওয়ায় বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে।