• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পচা মাংস বিক্রি হচ্ছিল স্বপ্ন’তে


প্রকাশিত: ৮:১০ পিএম, ২০ মে ১৮ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৮৩ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  পচা মাংস বিক্রি হচ্ছিল স্বপ্ন’তে।  ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে যায় স্বপ্নের জারিজুরি। shapno-www.jatirkhantha.com.bdঅত:পর-অভিযান চালানো হয় সুপার শপ- স্বপ্ন’র বনানী শো-রুমে। সেখন থেকে মিলে পচা গোস্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ, অবৈধ ও অস্বাস্থ্যকর নানা খাদ্যপণ্য তাও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে প্রমাণ পেয়ে এসব পণ্য জব্দ করেন। সেই সাথে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয় স্বপ্নকে।

রোববার দুপুর থেকে ২ ঘণ্টাব্যাপী বনানীর ওই শো-রুমে এ অভিযান চলে। পরে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, গরুর গোস্তের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি রাখা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পচা গোস্তসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি, মেয়াদ শেষে নতুন মেয়াদকাল বসানোর দায়ে ‘স্বপ্ন’কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চেইন সুপার শপ স্বপ্নের বনানী শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুর সোয়া একটার দিকে এই অভিযান শুরু হয়। চলে তিনটার পরও। দুই ঘণ্টার এই অভিযানে যেসব চিত্র বেরিয়ে আসে, সেটি অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদেরকেও অবাক করেছে। নামি প্রতিষ্ঠান হলেও আমদানি করা পণ্যের মেয়াদ শেষে এরা ফেলে না দিয়ে বা ধ্বংস না করে নতুন মেয়াদকাল বসিয়ে বিক্রি করত।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর স্বপ্নের একই শাখাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অভিযানে। দেড় বছরের পর একই রকমের অব্যস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারশপটির কর্মকর্তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে ক্রেতারা বলছেন, স্বপ্ন টাটকা, স্বাস্থ্যকর ও কম দামে পণ্য দেয়ার চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের আড়ালে বেশি দামে অবৈধ, নিম্নমানের এবং অস্বাস্থকর পণ্য বিক্রি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। মাঝে মধ্যে অভিযানে কিছু অর্থদণ্ড হলেও তা তাদের অপরাধ ও আয়ের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ জন্য তারা এসব অভিযানকে একদম পাত্তা দেয় না। অভিযান শেষে পূর্বের রূপে চলে স্বপ্নের বাজারে অবৈধ ব্যবসা।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জাতিরকন্ঠকে বলেন, ‘স্বপ্ন সুপার শপের বনানীর এই আউটলেটে মেয়াদোর্ত্তীণ পচনশীল পচা খাবার বিক্রি করা হচ্ছিল। এর মধ্যে পিৎজাসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড তৈরির উপকরণ রয়েছে। যেগুলোর মেয়াদ অনেক দিন আগে শেষ হয়েছে।

এছাড়া ইমপোর্টারদের (আমদানিকারক) কাছ থেকে কেনা পণ্যের তারিখ উঠিয়ে সেখানে নতুন তারিখ বসানো হয়েছিল। এমনকি সরকার বেধে দেয়া গরুর গোস্ত ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রির কথা থাকলেও তারা ৫৫০টাকা দরে বিক্রি করছিল। সাথে ৪৫০ টাকাতেও গরুর গোস্ত বিক্রি করা হচ্ছে। যেটার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

প্রতি বছর রোজায় গরু ও খাসির মাংসের দাম নির্দিষ্ট করে দেয় সিটি করপোরেশন। এবারও রোজা শুরুর চার দিন আগে ১৪ মে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এটি দেশি গরুর মাংস। আর ভারতীয় গরু আর মহিষের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয় ৪২০ টাকা।

রাজধানীতে কোনো কোনো বাজারে এই দাম মানা হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও এটা মানা হচ্ছে না। আর এটা না মানলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা ছিল।র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘তাদের ওখানে মেয়াদ ছাড়া পাওয়া পণ্য জব্দ করে না নষ্ট করা হয়েছে। তাদেরকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সকল অব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে আবারও জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’

এর আগেও নানা সময় মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্য, পচা মাছ বিক্রির দায়ে জরিমারা গুনেছে স্বপ্ন। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির মিরপুর আউটলেটে পচা আঙ্গুর বিক্রির চেষ্টার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন একজন ক্রেতা। এটি তখন ভাইরাল হয়। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর পচা মাছ বিক্রির দায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন স্বপ্নের একটি শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে।

২০১৭ সালের ৮ মার্চ একই অভিযোগে রাজধানীর ধানমন্ডির গ্রিন রোডে স্বপ্নর শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রির অভিযোগে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ স্বপ্নর উত্তরা শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকার পাশাপাশি স্বপ্নের সিলেট শাখাও পচা মাংস বিক্রির দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা গুণেছে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর।

অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট স্বপ্নর খিলগাঁও শাখাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বিএসটিআইয়ের অভিযানে। কেবল পচা, মেয়াদোত্তীর্ণ বা অবৈধ পণ্য বিক্রি নয়, অতিরিক্ত দাম রাখার দায়ে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বপ্নর মালিবাগ শাখাকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা।