ন্যাশনাল ব্যাংক টুইন টাওয়ারের পাইলিংয়ের গর্তে ধ্বস-ঝুঁকির মুখে সুন্দরবন হোটেল
এস রহমান.ঢাকা: ন্যাশনাল ব্যাংক টুইন টাওয়ারের পাইলিংয়ের গর্তে ধ্বস-ঝুঁকির মুখে সুন্দরবন হোটেল । ভবন নির্মাণের জন্য করা গভীর গর্তে ধসে গেছে রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনের পাশের গলির একাংশ। ঝুঁকির মুখে রয়েছে হোটেলের মূল ভবন। হোটেল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে অতিথি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, নির্মাণ কাজের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানিয়েছে রাজউক।
সুন্দরবন হোটেল ও তার পাশের রাস্তায় বিকেল পর্যন্ত ছোট বড় ৪টি ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবন হোটেলের বেইজমেন্টের একটি অংশ ধ্বসে যায় বিকেল চারটার দিকে। সব শেষ ধ্বসের ঘটনাটি ঘটে বিকেল চারটার দিকে।
বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ ধসে পরে রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক সংলগ্ন সুন্দরবন হোটেলের পাশের গলি। সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায় হোটেলটি পাশে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড টুইন টাওয়ারের জন্য করা পাইলিংয়ের গর্তে হোটেলের সীমানা প্রাচীর ও সড়কের একাংশ ধসে পড়ে। এতে হোটেলটির বেসমেন্টের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে হোটেলের অতিথীদেরকে সরিয়ে নেয়া হয় ভবন থেকে।
তবে ঐ জায়গার ফুটপাতের হকাররা অভিযোগ করেন, বেশ কিছুদিন আগেই নির্মানাধীন ভবনটির পাশের রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। ভবন নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে বিষয়টি জানানো হলেও তখন এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ঘটনায় কোন হতাহতের কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও ফায়ার সার্ভিস বলছে সতর্ক থাকার কথা। উদ্ধারকর্মীদের আশঙ্কা যেকোন মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘এখানে মাটি নরম। আর্টিফিশিয়াল আর্থ ফিলিংয়ের মাধ্যমে জায়গাটি পুরা করা হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে সমস্ত মাটি কিন্তু বালি। এই অবস্থায় যদি ভারি বৃষ্টি হয় তাহলে এই বালিগুলো ধসে যাবে, সরে যাবে। আলটিমেটলি এই রাস্তা পুরো ধসে যাবে এবং হোটেল সুন্দরবনও ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
ঘটনার খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ভবন নির্মানে অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তাঁরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘জায়গাটিকে পরিষ্কার করা হয়েছে। আমি হোটেলে গিয়েছিলাম। হোটেল সম্পূর্ণ খালি করা হয়েছে। সেখানে কোন গেস্ট নেই। কর্মচারী যারা আছেন তাদেরকেও বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। জায়গাটি আসলেই খুব ভয়াবহ অবস্থায় আছে। এমনকি রাস্তাও ধসে পড়তে পারে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ফজলে নূর তাপস এবং আমি দু’জনেই আমরা সরেজমিনে দেখলাম। খুব ভয়াবহ অবস্থা। আমরা জানি এই কাজ দেখভালের দায়িত্ব রাজউকের। কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্য ও আমি কেউ রাজউকের কাউকে এখানে পাইনি। যারা ভবন নির্মাণ করছেন তাদেরও অবহেলা রয়েছে। এত বিশাল জায়গা জুরে তারা ভবন নির্মাণ করছেন অথচ আশেপাশের ভবনের সেফটি সিকিউরিটি না দেখে। এটা তো সহ্য করা যায় না।’
এসময় রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ভবনটির নির্মাণ কাজের সময় যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, নিরাপত্তার কারণে উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থল থেকে দুরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ধস এড়াতে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।