• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ন্যাশনাল ব্যাংকে লুটেরারা ধপাস


প্রকাশিত: ১১:৫৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৬ বার

০০ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকটির এজিএম স্থগিত করেন হাইকোর্ট
০০ রন রিকের অবৈধ ধান্ধা বন্ধে নয়া পর্ষদ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

 

শফিক রহমান : অবশেষে ন্যাশনাল ব্যাংকে লুটেরারা ধপাস হয়ে পড়ল! বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে পারিবারিক ব্যাংক হিসেবে চালাতে গিয়ে আম ছালা সব খোয়ালো রন রিক হক শিকদার’রা। দীর্ঘদিন ধরে এদের লুটপাট দুর্নীতির বিরুদ্ধে খবর হলেও কোনো কাজ হচ্ছিল। নানা ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপে বার বার এরা পার পেয়ে যাচ্ছিল এই চক্রটি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ভুক্তভোগীরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে অবৈধ ধান্ধা বন্ধে নয়া পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মহলটি বলছেন, অবৈধ চক্রটি নতুন করে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানায় থাকা সিকদার পরিবারের ৯ সদস্য ও শিকদার গ্রুপের দুই কর্মী ন্যাশনাল ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সীমার অতিরিক্ত ১১৬ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের এই পাঁচ বছরে বিদেশে এই অর্থ খরচ করেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়,

সাধারণত একজন নাগরিক বছরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করতে পারেন। তবে সিকদার পরিবার ও গ্রুপের সদস্যরা বছরে গড়ে আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রন হক শিকদার কয়েকটি কার্ডে ৭০ লাখ ডলার এবং রিক হক শিকদার প্রায় ৩৬ লাখ ডলার খরচ করেছেন। অথচ এসব তথ্য ঋণ তথ্য ব্যুরোতে দাখিল করেনি ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এসব জালিয়াতি ব্যাংকের এমডি জানলেও তিনি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। অথচ রহস্যজনক কারণে তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন বার বার । ভুক্তভোগীদের দাবি এমডির বিরুদ্ধেও যেন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এদিকে ক্রেডিট কার্ডে লুটপাটের প্রক্ষিতে শিকদার পরিবারে সদস্যের ক্রেডিট কার্ড বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যাংক বাঁচাতে ন্যাশনাল ব্যাংক চিঠিতে দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। ন্যাশনাল ব্যাংক জানায়, দুই পরিচালকসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের কার্ডের মাধ্যমে নিয়মের বাইরের খরচের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এসব কার্ডের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ আছে এবং বকেয়া সমন্বয় করা হয়েছে।

যাহোক, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিধিবহির্ভূত লেনদেন করায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও সাবেক পরিচালক রিক হক সিকদারের ক্রেডিট কার্ডের হিসাব বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কার্ডের সীমা লঙ্ঘন করে লেনদের করায় ব্যাংকটিকে ৫৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। আর নিয়মের বাইরে লেনদেন করায় মতিঝিলের দিলকুশা ও পশ্চিম ধানমন্ডি শাখার এডি (বিদেশি মুদ্রার ব্যবসা) লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা-ও জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া জেড এইচ সিকদার উইমেনস মেডিকেল কলেজের নামে নিয়ম ভেঙে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব খুলে লেনদেন করায় হিসাবটি বন্ধের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসব নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন করা, পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও পরিচালক নির্বাচনসহ কয়েকটি কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সুপারিশে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে। সূত্রে জানা যায়, সাত সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেখানে বাদ পড়েছেন রন ও রিক হক শিকদার। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের ওপর আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন চেম্বার আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম মঙ্গলবার আদেশটি দেন।

আদালতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজীবুল আলম ও আহসানুল করিম। ব্যাংকের পরিচালক পারভীন হক শিকদারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।গত সোমবার পরিচালক পারভীন হক শিকদারের রিটের শুনানি নিয়ে ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকটির এজিএম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ব্যাংকটির গত ৩ অক্টোবরের স্থগিত হওয়া ৪০তম এজিএম আজ ২১ ডিসেম্বর আয়োজনের কথা ছিল।

নতুন করে যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে সেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। যিনি বর্তমানে মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন। এছাড়া নতুন পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পারভীন হক সিকদার, খলিলুর রহমান, মো. সফিকুর রহমান এবং মোয়াজ্জেম হোসেন।
নতুন পরিচালনা পর্ষদে স্থান পেয়েছেন আগের পরিচালনা পরিষদের তিন জন পরিচালক। বাকি পরিচালকদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।