• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নেতা-কর্মীদের জেলে ভরে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে শেষ করা যাবেনা-খালেদা জিয়া


প্রকাশিত: ৫:৪৩ পিএম, ১৭ জুন ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৩ বার

khalada jia-www.jatirkhantha.com.bdদিনা করিম.ঢাকা:  সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগ, বাংলাদেশে বর্তমানে সুশাসন নেই, বিচারালয়ে গিয়েও সুবিচার পাচ্ছেন না তারা। নেতা-কর্মীদের জেলে ভরে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে শেষ করা যাবেনা-।আদালতে  গেলে আমরা (বিরোধী দল) জামিন পাই না।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী  ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়ে পারোয়ানা জারি করেছে।  সে বিপদের মধ্যে আছে। অ্যাডভোকেট পাপিয়া আদালতে হাজিরা দিতে  গেছে, তাকে ভরে দিয়েছে। এখন  যেই যায়, তাকে ভরে  দেয়। ওরা (আওয়ামী লীগ) মনে করে,  জেলে ভরে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে শেষ করবে, বিএনপিকে ধবংস করবে। এতে কোনো লাভ হবে না। খালেদা জিয়া মঙ্গলবার রাতে বিচার, আদালত ও তার দলের নেতাদের বিচারের বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেও সরাসরি জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলেও এই প্রসঙ্গে কোন কথা বলেননি।

তবে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি প্রতিক্রিয়া সরাসরি না দিলেও তিনি বলেছেন দেশে সুশাসন নেই। বিচারালয়ে গিয়েও সুবিচার পাচ্ছেন না। তাতে এটাও বোঝাতে চেয়েছেন যে মুজাহিদ ন্যায় বিচার পাননি। তবে এনিয়ে তিনি সরাসরি কোন কথা বলতে নারাজ। সেটা বললে দলের ভেতরে ও বাইরে সমস্যা তৈরি হবে। জনগণের কাছে ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।

এই কারণে তিনি এই প্রসঙ্গে সরাসরি কোন কথা না বলে জামায়াতকে খুশী রাখতেই পুরো বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। ন্যায় বিচার মিলছে না সেটাও বুঝিয়েছেন। তিনি প্রধান বিচারপতির কথাও উল্লেখ করেছেন। বিচারপতি সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেকে কটাক্ষ করে। আমরা চুপ করে থাকি। উচ্চ আদালত সব সময় স্বাধীন ছিল। এখন কথা উঠেছে নিম্ন আদালত ৃ।

তিনি আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, উচ্চ আদালত সব সময় স্বাধীন ছিল। তিনি বলেছেন, ‘ছিল’। তার মানে এখন নেই। আরও বলেছেন, নিম্ন আদালত নির্বাহী বিভাগের হাতে। আমি প্রধান বিচারপতির এই কথার পর বলছি, মানুষ আজ  কোথাও ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। ন্যায় বিচার যে পাচ্ছেন না এর পাশাপাশি তিনি বিচারপতি নিয়োগে দলীয় করণ হচ্ছে সেই প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

এদিকে তিনি মঙ্গলবার রাতে বিচার বিভাগের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে কয়েকটি প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এরমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের বিষয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ক্ষমতা থেকে হটানো গেলে আওয়ামী লীগকে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আগে তারা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এবার তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে তাদের অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে। মুসলিম লীগ এত টুকরা হয়েছে, আওয়ামী লীগেরও একই অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ থাকবে না।

আরো বলেছেন, পাকিস্তান আমলে ক্ষমতায় থাকা মুসলিম লীগ এখন শুধু দলের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে। দলটি বিএনপি  নেতৃত্বাধীন  জোটেও রয়েছে। তিনি বলেন, পরাজিত হবে  জেনে আওয়ামী লীগ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে রাজি নয়। সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওরা (আওয়ামী লীগ) জানে, সুষ্ঠু নিবার্চন হলে তাদের কী অবস্থা হবে।  সেজন্য ওরা  ভোটেও  যেতে চায় না। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। বাংলাদেশে “গণতন্ত্রহীন’ অবস্থার অবসান ঘটবে আশা দিয়ে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ  দেন বিএনপি  চেয়ারপারসন।

আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের  কোঠায়  নেমে এসেছে। জনপ্রিয়তার ভয়েই তারা  দেশে সাধারণ নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার কারণেই তারা  ভোটে  যেতে ভয় পাচ্ছে। আর এ কারণেই তারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না। বিএনপি  চেয়াপরপারসন বলেন, তবে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নির্বাচন দিতে হবে। নেতাদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করতে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, আসবেও। তবে খুব বেশি  দেরি হবে,  সেটাও না। আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে, আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন।

সরকারের আরো সমালোচনা করে বলেন, দেশের নিয়ন্ত্রক হাসিনা নয়, পুলিশ। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেও  দেশের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই । হাসিনার নিয়ন্ত্রণে নয়, পুলিশের নিয়ন্ত্রণে  দেশ চলছে। পুলিশ বলছে  যে আমরা এই সরকারকে টিকিয়ে  রেখেছি, আমরা সবকিছু করি। ছাত্রলীগ হয়ে গেছে দৈত্য। একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। তিনি শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরাচার’ আখ্যায়িত করেন। বলেন, হাসিনা কেবল স্বৈরাচারই নয়, সে খুনি। গুম-হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে যতজন গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, সব খুন-গুমের সঙ্গে তেনারা জড়িত। জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগের তৈরি। আওয়ামী লীগই এর সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন পর পর আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহ বানানো হয়। যখনই তাদের (আওয়ামী লীগ) অবস্থা খারাপ হয়, তখন বিদেশিদের  দেখানোর জন্য আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহকে ধরছি। বিদেশিদের বলে, আমরা না থাকলে এই জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গিদের  গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সাজাও দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ব্যাপারে খালেদা বলেন, এই সরকার সন্ত্রাসের কথা বলে। তাদের সরকারে এক দল-দুই দল থেকে আসা মন্ত্রী হয়েছেন। এরা কী সন্ত্রাসী নয়? এরা অতীতে কত মানুষ হত্যা করেছে। সংসদে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে গালমন্দ করা হয়।

খালেদা জিয়া তার দলের এখনকার অবস্থা নিয়ে হতাশ নন। তিনি বলেছেন, কেবল সময়ের অপেক্ষায়। বিএনপির নাজুক অবস্থা চলছে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তার দৃষ্টিতে এসেছে। এর প্রেক্ষিতে দাবি করেন, বিএনপি শক্তিশালী ছিল, আছে এবং ইনশাল্লাহ থাকবে। আজকে সরকার খবরের কাগজগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। বিএনপির নামে উল্টা-পাল্টা, মিথ্যা-বানোয়াট, যা মর্জি হচ্ছে, তা লিখছে। ওই সব তাদের বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে, এই দলে কোনো বিভেদ নেই।

তিনি আবারও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ও আবার আন্দোলনের আভাস দিয়ে  নেতাদের মধ্যে আশার আলো জাগানোর চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, বর্তমানে বিএনপিতে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। দলকে সচল রাখার জন্য পুনর্গঠন করতে হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটাই আমরা করছি।  সেজন্য বিএনপি  শেষ হয়ে গেছে, বিএনপি নাই বা বিএনপি শক্তিশালী হতে পারছে না, এটা ঠিক নয়। আমরা ঠিক আছি। আমরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি। ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দলসহ সহযোগী সব সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব এনে পুনর্গঠিত করা হবে।  আমরা দলকে ঠেলে সাজানো নিয়ে কাজ করছি। দলের ত্যাগী নেতাদেরকে এ সময় মূল্যায়ন করা হবে।বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে এখন গোছানো হচ্ছে, সংগঠনকে নতুন করে সাজানো হবে। আর এ কারণেই আন্দোলন বন্ধ রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। আস্থা রয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তির ওপর। এই দলটি গত সাড়ে নয় বছর ধরে ক্ষমতা দখল করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েক করেছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।

তিনি বলেছেন, দেশ আজ কঠিন সময় পার করছে। দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই।যে যেভাবে পারছে লুটপাট করছে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা যতই নির্যাতন করছে ততই বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।দেশে এখন গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার বলতে কিছু নেই।