নেট বোলার বাংলাদেশী আলিসের বিশ্বজয়
নীপা খন্দকার : নেট বোলার থেকে এবার একেবারে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব জয় করে ফেললেন আলিস। নিখাদ এই বাংলাদেশী পুরো নাম আলিস আল ইসলাম। একেবারে এবার ঢাকার গলিপথ থেকে আলিস বিশ্বজয় করে ফেলেছেন। এর আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের কীর্তি আর কারও ছিল না। না ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে, না আন্তর্জাতিক ম্যাচেও।
অভিষেকে হ্যাট্টিক করার পর শুরু হয় আলোচনা কে এই আলিস? বাংলাদেশি তো? আজ আলিস আল ইসলামের খোঁজ নেবে আন্তর্জাতিক মিডিয়াও। অচেনা-অখ্যাত এই বোলার যে একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের কীর্তি আর কারও ছিল না। না ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে, না আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। সেই রেকর্ডটা আজ হয়ে গেল। নেট থেকে এই বোলারকে তুলে এনেছেন ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদের।
আজ রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় ও ইনিংসে ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ফরহাদ রেজাকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ২৩ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার। ঢাকার প্রিমিয়ার লিগেই খেলেননি আজ অভিষিক্ত আলিস। ঢাকার প্রথম বিভাগের ক্রিকেটে অবশ্য খেলেছেন।
ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা আলিসকে তাই প্রথমেই নিজের পরিচয় বৃত্তান্ত দিতে হলো। নামটাও পরিষ্কার করে বলতে হলো, একটু অন্য রকম নাম বলে, ‘আমি আলিস আল ইসলাম। ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা প্রথম বিভাগে খেলেছি। নেট বোলিং করার সময় সুজন (ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ) স্যার আমাকে দেখেন। দেখে ওনার বিশ্বাস হয় যে আমি ভালো করতে পারব, তারপর আমাকে টিমে নেন। তার পর টিম ম্যানেজমেন্ট, প্লেয়াররা আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। সেখান থেকেই আজকের একাদশে।’
একাদশে থাকবেন সেটি গতকালই জেনেছেন। মানসিক প্রস্তুতিটা যেন নিতে পারেন। বলছিলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় জানতে পারি খেলব। স্যার (খালেদ মাহমুদ) আমাকে ডেকে বলেন শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে। আমি প্রস্তুতই ছিলাম। এত বড় স্টেডিয়ামে, এত বড় টুর্নামেন্টে প্রথম খেলা নার্ভাস হওয়ার মতোই বিষয়। আমি প্রথমে নার্ভাস ছিলাম, তার পরও ভালো হয়েছে।’
ষষ্ঠ বোলার হিসেবে সাকিব বোলিংয়ে এনেছিলেন তাঁকে। এর মধ্যে ফিল্ডিংয়ে দুবার এমন ক্যাচ ফেলেছেন, মনে হচ্ছিল, এত দর্শক, ফ্লাড লাইডের আলোয় যেন ভড়কে গেছেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হ্যাটট্রিক!আলিস বললেন, ‘বিপিএলে এটা আমার প্রথম ম্যাচ। খোলাসা করে বলতে গেলে স্টেডিয়ামেই এটা আমার প্রথম ম্যাচ।
আমি আসলে অনেক নার্ভাস ছিলাম। তবে ক্যাচ দুটি ড্রপ করার পর সতীর্থরা অনেক সাহস দিয়েছে। কোচ সাহস দিয়েছেন। সবাই অনেক সাহস দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে যে, ভালো জায়গায় বল করতে পারলে ভালো কিছু হতে পারে। আমি শুধু ভালো জায়গায় বল করতে চেয়েছি।’
নিজের উঠে আসার গল্পটাও খুব বড় কিছু নয়। সংক্ষেপেই দিলেন উত্তর, ‘আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি কাঁঠাল বাগান গ্রিন ক্রিসেন্ট ক্লাব থেকে। তারপর কয়েক বছর সেকেন্ড ডিভিশন খেলার পর ফাস্ট ডিভিশন খেলি। তারপর এই বিপিএল।’আলিসের বাড়ি সাভারের বলিয়ারপুরে।
নিজের বিশ্ব জয় সম্পর্কে বললেন, ইনিংসের শেষ ওভারে বড় পরীক্ষা নিয়ে ভাবছিলাম। এরপর সাহস করলাম ডু আর ডাই! প্রথম দুই বলে চার খেয়েও দমে যাইনি। পরের বল-প্রথম দুটি বল স্ট্যাম্পের বাইরে করেছি। যেটা শফিউল ভাই ভালো জায়গায় পেয়েছে। তারপর বল করলাম স্ট্যাম্পের মধ্যে..ব্যাস কেল্লা ফতে! অতঃপর কোটিপতিদের ক্লাব হেরে গেলো আলিসের কাছে..।