নিরীহ মানুষের লাশের ওপর দিয়ে উনি ক্ষমতা দখল করতে চান: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, রাজনীতি নয়, খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধের নামে দস্যুবৃত্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণকে হত্যা করছেন। খালেদা জিয়া একজন খুনী। নিরীহ মানুষের লাশের ওপর দিয়ে উনি (খালেদা জিয়া) ক্ষমতা দখল করতে চান। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, বাংলার মাটিতেই তাঁর বিচার করা হবে। আর দস্যুতা, জঙ্গীবাদ কর্মকান্ড এবং বীভৎস্য কায়দায় মানুষ হত্যার কারণে দেশবাসী চাইলে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিও এমনিতেই নিষিদ্ধ হবে। কারণ এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। নাশকতা সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করার জন্য যতটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন আমরা তা হবো। বিএনপি নেত্রীকে বলবো এই নাশকতা বন্ধ করুন, তা না হলে এ দেশের জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদেও প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নাশকতাকারী, তাদের হুকুমদাতা ও অর্থের জোগানদাতাদের পাশাপাশি উস্কানী দাতাদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী ঘর থেকে বের হয়ে দলীয় কার্যালয়ে থেকে মানুষ হত্যার হুকুম দিয়ে যাচ্ছেন। জনরোষ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দলীয় কার্যালয়ে কাটাতারের বেড়া দিয়েছেন। উনি যেসব অপকর্ম ও বীভৎস্য কর্মকান্ড করছেন, তার বিরুদ্ধে দেশের জনগণ ফুঁসে উঠেছে। দেশের মানুষ এমনই ক্ষেপে গেছেন যাতে যে কোন সময় ওই কার্যালয়ে আক্রমণ হতে পারে। এটা বুঝেই উনি কার্যালয়ে কাটাতারের বেড়া দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, দেশে আইনের অভাব নেই। নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল না হলেও আলাদা একটি বিশেষ আদালত গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশে কিছু একটা ঘটবে এই আশায় খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে বসে আছেন। কী ঘটনা ঘটবে? কেউ এসে তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে ক্ষমতায় বসাবে এই আশায় কী উনি সেখানে বসে আছেন? ক্ষমতার লোভে মানুষ খুন করে যাচ্ছেন? দেশবাসীকে নাশকতাকারীদের ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী জানমালের ক্ষতি সাধনকারী নাশকতা কার্যক্রম প্রতিহত করা দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার। তাই দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এই নাশকতাকারীদের হাতে-নাতে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধৈর্য্য ও সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানাচ্ছি।
কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমানের মান্নাদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনারা অনেক কথা বলেন। দেশবাসী ভেবেছিল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁরা বিএনপি নেত্রীকে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা বন্ধ করতে বলবেন, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু সাক্ষাতের সময় তাঁরা এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। এরা একাধারে রাজনীতিও করেন, আবার সুশিলও সাজেন। আবার অনেকেই টকশ’র মাধ্যমে সহিংসতা-নাশকতামূলক কর্মকান্ডকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা উস্কানীমূলক বক্তব্য রাখছেন, সে বিষয়টিও আমরা মনিটরিং করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। উস্কানীদাতারাও এসব খুন-খারাবির দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ড. কামাল হোসেনদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা এতো বড় বড় কথা বলছেন তাঁরা কী কখনো বার্ণ ইউনিটে গিয়েছেন? আহত-নিহতদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন? উনারা বসে আছেন খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন, সেই পথ দিয়ে তাঁরা ক্ষমতায় যাবেন। কিন্তু তাদের সেই আকাঙ্খা কোনদিন পুরণ হবে না। তাদের আশা নিরাশা হয়েই থাকবে। দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। খালেদা জিয়া লাশ ফেলবে, আর উনারা ক্ষমতায় যাবেন- দেশের জনগণ তাদেই সেই সুযোগ দেবে না।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া তো রাজনীতি করছেন না। উনি রাজনীতির নামে দস্যুবৃত্তি করছেন। খালেদা জিয়া জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য জীবন সুরক্ষা করছেন। উনি এখন জঙ্গি নেতা। উনি মানুষের নেতা নন, জঙ্গিদের নেতা। বাংলাভাই উনার সৃষ্টি উনি বাংলাভাই এর মা। দেশবাসী যদি চায় জনগণ যদি চাই উনার রাজনীতি করা অধিকার নেই। সেটা হলো বাস্তবতা। দেশের মানুষ যদি চায়, জনগণ যদি চায় এমনিতেই তারা নিষিদ্ধ হবে। জনগণ চাইলে বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।
আবদুর রউফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ-হরতালের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা এটি কোন আন্দোলনের অংশ হতে পারে না। ১৯৭১ সাল পাকবাহিনী নৃশংসভাবে বাংলার মানুষকে যেভাবে খুন করেছে, এই হত্যাযজ্ঞ তাকেও হার মানায়। এছাড়া সম্প্রতি আইএসআইএস যে পদ্ধতিতে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে, বিএনপি-জামায়াত জোটও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। ফলে এটি বুঝা যায় এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আন্দোলনের নামে যারা পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে জানমালের ক্ষতিসাধনসহ নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
আবদুল মতিন খসরুর নাশকতা দমনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক আইন আছে। আইনের কোন অভাব নেই। সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন আছে। আইনগুলো সক্রিয় করা এবং আরো কার্যকর করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, এব্যাপারে আইন মন্ত্রীকে আমি বলেছি প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল না হলেও বিশেষ কোর্ট নির্ধারণ করে দেওয়া, যেখানে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের যেন বিচার করা হয়। তাদের বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। এধরনের নাশকতা মেনে নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মানুষ খুন করার বিরাট আগ্রহ আছে। মানুষ খুন করে লাশের উপর পা দিয়ে তার ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা। তিনি নির্বাচনেও বিশ্বাস করেন না ভোটেও বিশ্বাস করেন না। না হলে গত নির্বাচনের আগে আগে আমি উপযাচক হয়ে তাকে ফোন করেছিলাম। আমাকে কিভাবে অপমান করা হয়েছে দেশের মানুষ তা দেখেছেন। তিনি বলেন, ওই সময় টেলিফোন করে তাঁকে আলোচনার বসায় অনুরোধ করেছিলাম। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও তাদের প্রস্তাব করেছিলাম। তখন তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা আমি পাইনি। তিনি বলেন, জামায়াত নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করতে না পাড়ায় জামায়াত নির্বাচনে আসতে পারেনি বলেই বিএনপিও নির্বাচনে আসেনি। এটাই হলো বাস্তব কথা। এখন খালেদা জিয়া জামায়াতকে নিয়ে মানুষ হত্যায় নেমেছেন। উনার কোন কাজ নেই, শুধু প্রতিদিন কত মানুষ পুড়বে, কত মানুষের লাশ দেখবে- এটাই উনি চায়। এগুলোর বিচার ইনশাল্লাহ আমরা করবো। এটা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও হাজী মোহাম্মদ সেলিমের পৃথক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়ে মানুষ হত্যার হুকুম দিয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে তাঁর (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কি অপরাধ করেছে? এদেশের মানুষ কি উন্নত হতে পারবে না? আসলে মানুষের শান্তি দেখলেই উনার অশান্তি শুরু হয়। মানুষের জীবনের শান্তি উনার সহ্য হয় না। সেই অশান্তির আগুণে উনি দেশকে ছারখার করে দিচ্ছেন। তাই খালেদা জিয়াকে বলবো, এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা যেন উনি বন্ধ করেন। অবশ্যই তাঁর বিচারও বাংলার মাটিতে হবে।
।