নিরপেক্ষ ভোট হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ রাঙ্গার বিশেষ বৈঠক
লাবণ্য চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ঘনিষ্ট ব্যক্তিত্ব জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। এসময় তাঁরা পারিবারিক পরিবেশে কথাবার্তা বলেন।
ছবিতে রাঙ্গার সঙ্গে তার মেয়ে মালিহা তাসনিম জুঁইকেও দেখা যাচ্ছে। তারা দাঁড়িয়ে পারিবারিক পরিবেশে ছবিতে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী মাঝে দাঁড়ানো আর দুই পাশে মসিউর রহমান রাঙ্গা ও তার মেয়ে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন। এই ছবিতেই বোঝা যাচ্ছে রাঙ্গা কতোটা সমাদৃত নেত্রীর কাছে।
তবে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে বিশেষ বৈঠকও করেছেন। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশেষ কৌশলগত কথাবার্তা হয়েছে তাঁদের মধ্যে। তবে কি কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বেশি তথ্য দিতে রাজি হননি কোনো পক্ষই।
তবে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে গণভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। সুষ্ঠু অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মশিউর রহমান রাঙ্গা।
মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে। এই আসনে ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাঙ্গা।
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত রাঙ্গার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি। ২০১৪ সাল থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন নস্যাৎ করতে তার সরব ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। বিশেষ করে হরতাল অবরোধে রাস্তায় যানবাহন নামাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন রাঙ্গা।
সরকার দলীয় নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ চেয়েও কখনও কখনও বেশি সরব দেখা গেছে তাকে। বিদায়ী সংসদে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের যখন সংসদ বর্জনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, তখন রওশন এরশাদের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই তাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচনের পর কাউন্সিলেও মহাসচিব নির্বাচিত হন, তবে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তাকে সরিয়ে দেন জিএম কাদের।
মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ অনুসারীদের মনোনয়ন না দেওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে গেছেন রওশন এরশাদ। তবে রওশনের ঘনিষ্ঠ রাঙ্গা, সাবেক এমপি জিয়াউল মৃধাসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
মসিউর রহমান রাঙ্গা যেদিন বৈঠক করেন ওই দিনে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। বিষয়টি কাকতালীয় নাকি কোন যোগসূত্র রয়েছে এ নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
যাহোক, প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ঘনিষ্ট ব্যক্তিত্ব জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আসলে কি নিয়ে বৈঠক হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আসলে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।
তাই দেখা করতে গিয়েছিলাম। কি আলাপ করলেন? না তেমন কিছু না এ ধরেন ভোট নিয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন করছি স্বতন্ত্র। তাঁকে জানালাম। তিন বললেন, করেন, কোনো অসুবিধা নাই, ১০০% নিরপেক্ষ ভোট হবে। উৎসবমুখর ভোট হবে। মার্কা মার্কার মতো নির্বাচন করবে। স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র’র মতো ভোট করবে। কোনো অসুবিধা নাই’।