• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নারী লুটেরার পেটে ২কোটি টাকার চাল


প্রকাশিত: ৮:২৪ পিএম, ১১ মে ২৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৩ বার

বিশেষ প্রতিনিধি পৌনে ২ কোটি টাকার চাল আত্মসাত করে উধাও হয়েছেন ডুগডুগি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) আনোয়ারা বেগম।স্থানীয় থানা পুলিশ জানায়, এ খাদ্য কর্মকর্তা সরকারি চাকরি থেকে দুমাস পরে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবসরে যাওয়ার আগেই প্রায় দুকোটি টাকার চাল আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) আনোয়ারা বেগম। এ ঘটনায় ঘোড়াঘাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনুস আলী মণ্ডল দুর্নীতি দমন আইনে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যা ৭টায় গণনা শেষে এক কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ টাকার চাল এবং ৪ হাজার ২৭৮টি খালি বস্তা; যার মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০ টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়। বিষয়টি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহমেদ।

এদিকে, এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পরই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আনোয়ারা বেগম গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের আব্দুল মতিন মণ্ডলের স্ত্রী।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ৫ বছর ধরে ডুগডুগি এলএসডি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ারা বেগম। দুমাসের মধ্যে তার অবসরে যাওয়ার কথা। গত ১৫ এপ্রিল ঘোড়াঘাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনুস আলী মণ্ডল ডুগডুগি এলএসডি গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে চাল ও বস্তা কম দেখতে পান। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্যে খাদ্যগুদামের হিসাব দিতে একাধিকবার আনোয়ারা বেগমকে বলা হলেও তিনি তা না দিয়ে গুদামের চাবি নিয়ে চলে যান।

গত ২৫ এপ্রিল কাউকে না জানিয়ে ছুটি না নিয়ে গুদামে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে গা-ঢাকা দেন আনোয়ারা বেগম। এ ঘটনায় গুদামে চালের ঘাটতি রয়েছে — এমন সন্দেহে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গঠিত তদন্ত কমিটি ডুগডুগির দুটি খাদ্য গুদামের খামাল (চালের বস্তার স্তূপ) গণনা করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় গণনা শেষে এক কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ টাকার চাল এবং ৪ হাজার ২৭৮টি খালি বস্তা; যার মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০ টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়। এর সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২৫ এপ্রিল ঘোড়াঘাটের ডুগডুগির ওসি-এলএসডি আনোয়ারা বেগম কোনো ছুটি না নিয়েই খাদ্যগুদাম সিলগালা করে উধাও হয়ে যান। এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনুস আলী পহেলা মে ঘোড়াঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের আবেদনে জেলা প্রশাসক ঘোড়াঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানকে দায়িত্ব দেন।

চুক্তিবদ্ধ ধান-চাল সরবরাহকারী মিলাররা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে দুর্নীতি চলে আসছে। তদন্ত করলে আরও অনিয়ম বের হয়ে আসবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহন আহম্মেদ জানান, ডুগডুগি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। চাল আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর আনোয়ারা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তসহ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানালেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী। এদিকে, ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, থানায় মামলা হয়েছে। যেহেতু সরকারি মালামাল আত্মসাতের বিষয়, এ কারণে মামলাটি দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি ৩১৯ মেট্রিক টন চাল ও চার হাজার ২৭৮টি খালি বস্তা গায়েব হওয়ার ঘটনায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম, নিরাপত্তা প্রহরী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে, দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগিহাট এলএসডি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম (৫৪)। আর মাত্র দুমাস পরেই অবসরে যাবেন খাদ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা। এর মধ্যেই হঠাৎ আত্মগোপনে তিনি। বন্ধ তার মোবাইল ফোনটি। ছুটি না নিয়ে কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকায় তার গ্রামের ঠিকানায় একাধিকবার নোটিশ পাঠায় উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়। অভিযোগ ওঠে, গুদামে থাকা সরকারি চাল আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা খাদ্যে নিয়ন্ত্রক।

দিনাজপুর জেলা দুদকের সহকারী পরিচালক ইসমাইল মুসা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিনকে বলেন, রোববার তারা তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান কার্যালয়ে মামলা অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। অনুমোদনের পর তারা বাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।