• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

নারীর নিরাপত্তায় মেয়েদের প্রয়োজনেই বড়ি বানাচ্ছেন হাইফা


প্রকাশিত: ৩:৪৬ পিএম, ২৯ জুলাই ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৭ বার

haifa-www.jatirkhantha.com.bdএএফপি অবলম্বনে নীপা খন্দকার ঢাকা: জুন মাসে ইন্টারন্যাশনাল ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়নশিপে শারীরিক বিভাগে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন হাইফা। দুবাইয়ে এই প্রথম এ ধরনের প্রতিযোগিতা হয়।নারীর নিরাপত্তায় মেয়েদের প্রয়োজনেই বড়ি বানাচ্ছেন হাইফা।কালো কোঁকড়ানো চুলে শক্ত করে ঝুঁটি বেঁধে রেখেছিলেন হাইফা। চুল ঝাঁকিয়ে বলেন, ১০ বছর ধরে মন দিয়ে তিনি শরীরচর্চা করেন। আরব সমাজে মেয়েদের এ ধরনের শরীরচর্চা তো দূরের কথা, পেশি তৈরির ব্যাপারটিও সহজে মেনে নেওয়া হতো না।

বাহরাইনের হাইফা মুসাবির ওজন দ্রুত বাড়ছিল। ৩২ বছর বয়সেই তিনি এতটা মোটা হয়ে গিয়েছিলেন যে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। ওজন কমাতে যান একজন শরীরচর্চাবিদের কাছে। তাঁর কাছেই জানতে পারেন শরীরকে সুঠাম রাখার কৌশল।ওজন কমানোর জন্য শরীরচর্চা শুরু করেন হাইফা। এর পাশাপাশি চলে পেশিকে সুগঠিত করার কাজ।

haifa-2শুরুতে পেশি গঠনরে ব্যাপারে কিছুই জানতেন না হাইফা। এ জন্য বইপত্র জোগাড় করে পড়াশোনা শুরু করেন। তারপর কাজে নেমে পড়েন। ধীরে ধীরে এটি তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পেশি সুগঠিত করার কাজটি সহজ ছিল না। আরবের সমাজে নারীদের শরীরচর্চা বা পেশি গঠনের খুব বেশি প্রচলন নেই। কিন্তু হাইফা নিজের স্বপ্ন পূরণে ছিলেন অবিচল। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা শুরু করেন তিনি। অন্য সব কাজের চেয়ে এটিই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

প্রথমে হাইফার পরিবার এতে আপত্তি জানায়। কিন্তু পরে তাঁর পাশে দাঁড়ায় সবাই। উৎসাহ দিতে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে হাইফার শরীরচর্চা।

স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হাইফার মুখ। কালো কোঁকড়ানো চুলে শক্ত করে ঝুঁটি বেঁধে রেখেছিলেন হাইফা। চুল ঝাঁকিয়ে বলেন, ১০ বছর ধরে মন দিয়ে তিনি শরীরচর্চা করেন। আরব সমাজে মেয়েদের এ ধরনের শরীরচর্চা তো দূরের কথা, পেশি তৈরির ব্যাপারটিও সহজে মেনে নেওয়া হতো না। তাই হাইফাকে নানা কটূক্তি শুনতে হয়েছে।

১০ বছর ধরে চেষ্টা চলে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শরীরচর্চা সংস্থার কাছ থেকে সনদ পান হাইফা। দুবাইয়ে তিনি ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। নারী ও পুরুষদের তিনি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।

জুন মাসে ইন্টারন্যাশনাল ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়নশিপে শারীরিক বিভাগে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন হাইফা। দুবাইয়ে এই প্রথম এ ধরনের প্রতিযোগিতা হয়।

ওই ইভেন্টে আরব থেকে আসা নারী ছিলেন মাত্র দুজন। একজন হাইফা ও আরেকজন জর্ডানের এক নারী। হাইফা এখন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান। সেখানে তিনি বাহরাইন বা উপসাগরীয় কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। কারণ নারীদের জন্য এসব দেশে জাতীয় কোনো শরীরচর্চা দল নেই। কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ারও সুযোগ নেই।

এতে পিছপা হননি হাইফা। যেভাবেই হোক, স্বপ্ন তাঁকে পূরণ করতেই হবে। অক্টোবরে হাইফা পর্তুগাল যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। সেখানে তিনি ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করবেন। পর্তুগালের প্রশিক্ষক আন্দ্রে সোসা তাঁকে সহায়তা করবেন। হাইফা বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাঁর স্বপ্ন। তিনি তা পূরণ করতে চান। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, যদি পর্তুগাল তাঁকে স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দেয়, তাহলে তিনি গ্রহণ করবেন না কেন? তবে তিনি আশা করেন, একদিন বাহরাইনের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

হাইফা বলেন, আশার কথা হলো আরবের অনেক নারী খেলাধুলার দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে ওজন কমানোর ব্যাপারেও আগ্রহী হচ্ছেন। তাঁদের শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও প্রশিক্ষণ দেন হাইফা। তাঁদের অনেকেই চিন্তার সীমাবদ্ধতা থেকে বের হতে পারেননি। অনেকে হাইফাকে নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করেন। এসবে কান দেন না হাইফা।

শরীরচর্চাকেন্দ্রে পেশি তৈরির জন্য ভার উত্তোলন করছিলেন সাজা জামিল। তিনি বলেন, পুরুষেরা জানতে চায়—কেন তিনি পেশি তৈরি করে শরীরের কোমলতা নষ্ট করছেন। আরবের সমাজ নারীদের শরীরচর্চা ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু তিনি এসবে কান দেন না। শরীরচর্চাকে তিনি ভালোবাসেন।

জামিল এরই মধ্যে ব্রিটেনের এক প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক পেয়েছেন। হাইফার মতো তাঁর পরিবারের সদস্যরাও প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এখন তাঁরা উৎসাহ দেন। জামিল বলেন, এটা ঠিক যে মঞ্চে আমাদের বিকিনি পরতে হয়। তিনি এটাকে অন্যভাবে দেখেন না। কাজের প্রয়োজনে তাঁদের শরীর উন্মুক্ত রাখতে হয়। তাঁর স্বপ্ন খেলাধুলা করা। আর সে স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে চান।