নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন-নূর হোসেন-তারেক সাঈদসহ অভিযুক্ত ৩৫
ঘটনার প্রায় এক বছর পর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার অভিযোগপত্র আজ বুধবার আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ৩৫ জনের নাম রয়েছে অভিযোগপত্রে। দুই মামলায় এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়; তবে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এক বাদী।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ মণ্ডল নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আগামী ১১ মে পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
সাত খুনের ঘটনায় করা মামলার আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান, ১৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত হিসেবে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া ২১ জনের নাম রয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি ভারতে আটক নূর হোসেনের নাম রয়েছে এক নম্বরে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, সাবেক দুই র্যাব কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানার নামও রয়েছে অভিযোগপত্রে। তিনি আরও জানান, মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ আলামত হিসেবে দুই বস্তায় ১৬২ ধরনের আলামত আদালতে উপস্থাপন করেছে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। পরের দিন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন। মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছিল। নাম উল্লেখ করা বাকি পাঁচজন হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, ইকবাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। আজ আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে নূর হোসেন ছাড়া বাকি পাঁচজনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
অপহৃতদের মধ্যে ৩০ এপ্রিল ছয়জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এর পরের দিন আরও একজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর নিহত চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল একটি মামলা করেন।
এই দুই মামলায় আজ একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান মামলার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন।
তবে মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি এই অভিযোগপত্র নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আজ আদালত থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর করা মামলায় যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেন তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হলো, এ বিষয়ে তাঁকে পুলিশ কিছু জানায়নি। তিনি অভিযোগপত্রের অনুলিপি সংগ্রহ করে আদালতে নারাজি দেবেন বলে জানান।