• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

দুদকে সাড়ে ৪ ঘন্টা জেরা-সাড়ে ৭ হাজার কোটি লুটপাটের ব্যাখ্যা দিলেন জাহাঙ্গীর


প্রকাশিত: ৩:০৫ এএম, ৭ জুন ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দুদকে তাকে সাড়ে ৪ ঘন্টা জেরা করা হয়।জেরার জবাবে তিনি বলেছেন, দীর্ঘ ১৭-১৮ মাস ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদকসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্য দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমার নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখানো হয়েছে। আমার স্বাক্ষর ব্যতীত কে বা কারা ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে সেটা জানতে চাই, আমি ন্যায় বিচার চাই।

বুধবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব বলেন জাহাঙ্গীর আলম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কে বা কারা অভিযোগ করেছেন তাদের ঠিকানা বা হদিস নেই, কাগজের সঙ্গে বাক্তব্যের কোনো মিল নেই। দুদক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। গত ২১ মে তারা আমাকে ডেকেছিল। আজকেও তারা আমাকে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছিল। আমি দুদক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এখানে এসেছি।

৭ হাজার ৫ শ কোটি টাকা আত্মসাতের নাটক সাজানো হয়েছিল। মন্ত্রণালয় থেকে ৬ থেকে সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সেই জায়গায় কাগজের মধ্যে লিখে দিয়েছে, সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ! যত মিথ্যা, পচা, অন্যায় অনিয়মের কথাগুলো লেখা হয়েছে। কে বা কারা লিখেছে সেটার কোন তথ্য নেই।

তিনি আরও বলেন, দুদক আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তারা বলেছে, অভিযোগের সত্য-মিথ্যা জানি না, অভিযোগ এসেছে তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি, জানতে চাই। আমি লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। আমি বলেছি, অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। সর্বশেষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেখানো হয়েছে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আপনারা জানেন, একজন মেয়রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হলে সিইও ও মেয়রের যৌথ স্বাক্ষর লাগে। আর আমার স্বাক্ষর গোপনীয় কিছু নয়। আমার পাসপোর্ট আছে, ভোটার আইডি কার্ড আছে। তাছাড়া সরকারের কাছে ও সিটি করপোরেশনের জন্য আমার নির্ধারিত স্বাক্ষর আছে।

জাহাঙ্গীর বলেন, আমিও ন্যায়বিচার চাই। আমার নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখানো হয়েছে। আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে আজ কয়েক শ স্বাক্ষর দিয়েছি। আমি বলেছি, আমার যে রাষ্ট্রীয় স্বাক্ষর আছে তা যাচাই-বাছাই করা হোক, প্রয়োজনে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হোক। বা যারা বিশেষজ্ঞ তাদের মতামত নেয়া হোক। আমি গাজীপুরের জন্য, জনগণের জন্য তিন বছর কী কাজ করেছি তা দেখেছেন। আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, সেটা পরীক্ষিত।

আমাকে যেমন জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল, তেমনি আমার মাকেও ভোট দিয়ে সেটি স্মরণ রেখেছে। আমি চাই আমার মতো বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যেন এ রকম হয়রানির শিকার না হয়। যেহেতু দুদক আমাকে ডেকেছে, যা যা জানতে চেয়েছে তার প্রমাণসহ শতভাগ জবাব দিয়েছি, তারাও সার্বিক সহযোগিতা করেছে। কোনো ধরনের মিথ্যা বানোয়াট গল্প দিয়ে যেন কেউ কোনো মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সে দিকে নজর দেওয়ার জন্য দুদকের প্রতি আহ্বান জানাই।

আপনি বলছেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। ভিত্তিহীন অভিযোগকে ভিত্তি করেই কি দুদক অনুসন্ধান করছে? এটা কি মেরিটলেস? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। তারা কোথা থেকে কীভাবে আমার সম্পর্কে এমন তথ্য পেলেন। আমি আমারটা ক্লিয়ার করে গেলাম। আমি অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করেছি, মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও বিচার চেয়েছি।

যারা দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে চায় তাদের যদি এই রকম হয়রানি করা হয় তাহলে তারা কাজ করতে চাইবে না। তবে আমার সততা ও দক্ষতা আছে বলেই এখানে এসেছি। অনেক মানুষ কিন্তু দুদকে আসতে ভয় পান। আমি দুদক ও আইনকে সহযোগিতা করতেই এখানে এসেছি। আমি সঠিক সুন্দর ও শতভাগ স্বচ্ছতার পক্ষে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরেই কি আপনাকে হয়রানি করতে এমন অভিযোগ করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে গাজীপুরের লাখ লাখ মানুষ আছে। আমার হয়রানির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা সেটা আপনারা ভালো বলতে পারেন।

গাজীপুরের নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি অন্তত একটা দায়িত্ব পেয়েছেন। নগর উন্নয়নের জন্য তিনিও কাজ করবেন। যে কেউ যদি নগর উন্নয়নে কাজ করেন তবে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি আমার বড় ভাই। আমি চাই তিনি তার কর্মদক্ষতা দিয়ে গাজীপুরের মানুষের জন্য ভালো কিছু করবেন, এজন্য আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব।