দখল বাণিজ্যে বিএনপি নেতা-প্রখ্যাত কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখল
মাদারীপুর সংবাদাদাতা : এবার প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখল করলো বিএনপি নেতা সোহের হাওলাদার। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই অপকর্মের নায়ক মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় বিএনপির এক নেতা।তার বিরুদ্ধে প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার একটি ঘরে একাধিক ছবি, বই ও আসবাব ভাঙচুর করে ফেলে দেন তিনি। পরে ওই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত করা হয়।অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতার নাম সোহেল হাওলাদার। তিনি বিএনপির ডাসার উপজেলা কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার কাজীবাকাই এলাকায়।
বর্তমানে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে কালকিনির ইউএনও উত্তম কুমার দাশ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘সোহেল হাওলাদার নামের বিএনপির এক নেতা লেখকের ঘর দখলে নিয়ে ওএমএসের ডিলারের চাল রেখেছিলেন। আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তিনি ওই চাল সরিয়ে ফেলেছেন। ওই দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডাসার ও কালকিনি উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মৌজায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে ২ একর ৯৭ শতাংশ জমি সরকারের খাসজমি হিসেবে রেকর্ড। গত শনিবার দুপুরে লেখকের পৈতৃক ভিটার একটি টিনশেড ঘরের (সুনীল স্মৃতি পাঠাগার) তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তাঁর লোকজন। পরে তাঁরা লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বই, আসবাব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ একাধিক ছবি ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁরা ওই ঘরে ওএমএসের প্রায় এক ট্রাক চাল রেখে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাগানো একটি সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়।
লেখকের পৈতৃক ভিটা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকেই সোহেল হাওলাদার লোকজন নিয়ে লেখকের জমি তাঁর নিজের বলে দাবি করেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী–সমর্থক তাঁর সমালোচনা করলে তাঁদের বাড়িঘরে হামলা চালান সোহেল। এখন ভয়ে কেউ কথা বলছেন না। এই সুযোগে সোহেল তাঁর লোকজন নিয়ে এখানকার টিনশেড ঘরের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই ঘরে আবার ওএমএসের চাল রাখেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই জানে।’
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার তালা ভেঙে এক ব্যক্তি দখলে নেওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে জানতে সোহেল হাওলাদারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কল ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ সম্পর্কে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার তালা ভেঙে এক ব্যক্তি দখলে নেওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা লেখকের বাড়িটি দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।’
এদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা বেদখল হওয়ায় ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা। তাঁদের দাবি, দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করে লেখকের ভিটা দখলমুক্ত করে তা সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে হবে।কথাসাহিত্যিক ও গপ্পোর সম্পাদক মাসুদ সুমন বলেন, ‘প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও আমাদের প্রিয় লেখকের শেষ স্মৃতিচিহ্নটি তাঁর পৈতৃক ভিটা। যেটা দখলের কথা শুনে আমাদের হৃদয় ব্যথিত করেছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দখলদারের বিচার নিশ্চিত করে প্রশাসনের কাছে বেদখল হওয়ার জমি পুনরুদ্ধারের দাবি জানাই।’
উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের মাদারীপুরের শুধু গর্ব নন, পুরো দেশের গর্ব। সরকারিভাবে লেখকের পৈতৃক ভিটায় সুনীল সাহিত্য গবেষণাকেন্দ্রসহ একটি জাদুঘর করার কথা। অথচ সরকার পরিবর্তনের পর সেটি দখল হয়ে যাওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। খুব দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে লেখকের পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।