ত্যাগিদের মূল্যায়ন করে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। তারা নতুন দলে আসা ব্যক্তিদের সামনের সারির নেতা না বানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হওয়ায় অনেক দেশ সেটাকে ভাল চোখে দেখছে না। যে কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরে পাল্টা প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেন তারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে প্রায় তিনটা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
এসময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. মসিউর রহমান, সতীশ চন্দ্র রায়, ড. অনুপম সেন, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মোজাফফর হোসেন পল্টু, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির, খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, ড. মির্জা এম. এ জলিল, মো. রশিদুল আলম, প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুর, আব্দুল খালেক, ড. শামসুল আলম, আতাউর রহমান, একেএম রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য অনেক সময় নিয়ে বক্তৃতা করেন। কেউ কেউ একাধিকবার কথা বলেন। তাদের বক্তব্যে দেশের চলমান রাজনীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গ উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
বৈঠকে সূত্র জানায়, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, দেশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু দেশি নয়, বিদেশি ষড়যন্ত্রও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক খুব ভালো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে অনেক চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল খালেক বলেন, তৃণমূলের মতামত নিয়ে আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা দরকার। সেক্ষত্রে ত্যাগীদের মূল্যায়ণ করতে হবে। ভাল প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। আর দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত জয় পাবে।তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় দলে এসেই মনোনয়ন পায়, সামনের সারির নেতা হয়ে যায়। এটা কেন হবে? এতে পুরোনোরা হতাশ হয়। দলে এসে প্রথমে পেছনের সারিতে কাজ করবে। ধীরে ধীরে সামনে আসবে।
সভায় দলের আরেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিএনপি এখন আন্দোলন করছে। তারা নানা ধরনের দাবি করছে। দাবি তারা করতেই পারে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোন ধরনের বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আন্দোলন করা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে এই অধিকারের নামে যদি ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন করে, মানুষ হত্যা করে তাহলে কোন ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
মোহাম্মদ জমির বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিদেশিদের সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন। সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রীকে কেন দিতে হয়? বিদেশিরা যখন যে বিষয়ে প্রশ্ন তোলে তখন সে সংশ্লিষ্ট নেতাদের/মন্ত্রীদের জবাব দিতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের ইস্যু হলে ব্যবসায়ীরা এর জবাব দেবেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় যখন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলি তখন তারা যৌক্তিক বিষয়ও মানতে চান না। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার অনেক তথ্যই তারা স্বীকার করতে চান না।
সভায় ড. মির্জা এম. এ জলিল বলেন, বঙ্গবন্ধু যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার একভাগ আমরা ইতোমধ্যে পূরণ করেছি। দ্বিতীয় ভাগের অর্ধেকের বেশি পূরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের বাকি কাজগুলোও শেষ করতে হবে। যা করলে বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। খুবই ভয়ানক অবস্থা। সেখানে আমাদের নিজেদের উৎপাদন নিজেরা বাড়াতে পারলে ওই দুর্ভিক্ষের আঁচ বাংলাদেশে লাগবে না।
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কথা হচ্ছে, যারা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নিয়েছে, চিকিৎসা নিয়েছে, এখন তারা যদি প্রশ্ন ওঠায় যে টাকা গেল কোথায়? রিজার্ভ নিয়ে তো খুব আলোচনা। এই খরচগুলোর দিকে কি কারও নজর আছে? আমাদের দেখি এখন এতগুলো মিডিয়া, সবাই ওই একই কথা বলে বেড়ায়। তারা কি কখনও খুঁজে দেখেছে যে কী কী খরচ আমরা করেছি? কীভাবে করেছি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথা ছিল সব ঘরে ঘরে আলো জ্বালব। আমরা প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন এই ইউক্রেনের যুদ্ধের পর তেল কিনতে অসুবিধা হচ্ছে, গ্যাস আনতে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ না, আজকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি সব জায়গায়; তারাই তো জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। তারা নিজেরাই তো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে কিছু দিনের জন্য আমাদের কষ্ট পেতে হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, হয়ত আগামী মাস থেকে এত কষ্ট আর থাকবে না।