তিন বিদেশীর চোখে পহেলা বৈশাখ কেমন হলো?
লাবণ্য চৌধুরী : পহেলা বৈশাখ কেমন হলো? এমন প্রশ্নে তিন বিদেশী জানালেন তাদের অভিমত।স্প্যানিশ বিভাগের শিক্ষক ক্রিশ্চিনা জানালেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব, বাঁশির আওয়াজ, মানুষের উচ্ছ্বাস তাকে রাস্তায় বের করে এনেছে। ড. ল্যারি স্টিলম্যান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় নববর্ষে অ্যালকোহলের ছড়াছড়ি থাকে। বাংলাদেশে আনন্দের ছড়াছড়ি।
ড. টম ডেনিলসন বললেন, ‘বাংলাদেশর মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ। এই যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। সবাই আমাদের উইশ করছে, হাত মিলাচ্ছে, ছবি তুলছে। যা অন্য কোনো দেশে চিন্তাও করা যায় না।’
সরেজমিনে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শাড়ি পরা এক বিদেশিনীর সঙ্গে। ছোট্ট ক্যামেরা ছবি তুলছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার। ছবি তুলছেন মুখোশের। শিশুর গালে আঁকা ট্যাটুর। এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিতেই মিষ্টি হেসে ‘হ্যালো’ দিলেন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বললেন ‘শুভ নববর্ষ’।
তিনি ক্রিশ্চিনা রদ্রিগেজ। এসেছেন বার্সোলনা-রিয়াল মাদ্রিদের দেশ স্পেন থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিস্টিটিউট অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ (আইএমএল)–এর স্প্যানিশ বিভাগের শিক্ষক। ছয়মাস ধরে আছেন বাংলাদেশে। বাঙালির প্রাণের উৎসব, বাঁশির আওয়াজ, মানুষের উচ্ছ্বাস তাকে রাস্তায় বের করে এনেছে বলে জানালেন।
স্পেনের নববর্ষ উৎসব আর বাংলার উৎসবের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে ক্রিশ্চিনা বলেন, ‘স্পেনে নববর্ষের সময় অনেক শীত থাকে। ফলে লোকজন ঘরের ভেতরই থাকে। এভাবে রাস্তায় নেমে আসে না। কোনো রেলি হয় না। সবাই নিজ নিজ পরিচিতদের ফোন, এসএমএস বা মেইলে শুভেচ্ছা জানায়।’ পরিবারসহ রাস্তায় নামা, শিশুদের বাবার হাত ধরে হাঁটা তার কাছে বিশেষ কিছু মনে হয় বলে জানালেন ক্রিশ্চিনা। প্রফেসর টম ডিনলসন ও ড. ল্যারি স্টিলম্যানের সঙ্গে তাদের বাংলাদেশি গবেষনা সহযোগী।
চারুকলা ভবনের সামনে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন দুইজন। তাদের একজন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. টম ডেনিলসন, আরেকজন মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ল্যারি স্টিলম্যান। তারা এসেছেন গবেষণার কাজে।
অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নববর্ষের পার্থক্য জানতে চাইলে ড. ল্যারি স্টিলম্যান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় নববর্ষে অ্যালকোহলের ছড়াছড়ি থাকে। বাংলাদেশে আনন্দের ছড়াছড়ি। অস্ট্রেলিয়ায় উদযাপন করা হয় রাতে। বাংলাদেশে দিনে। অস্ট্রেলিয়ায় নববর্ষে লাখ লাখ টাকা অপচয় করা হয় আতশবাজির পিছনে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের নববর্ষ খুবই শিল্পিত লেগেছে তার কাছে।
ড. টম ডেনিলসন বললেন, ‘বাংলাদেশর মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ। এই যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। সবাই আমাদের উইশ করছে, হাত মিলাচ্ছে, ছবি তুলছে। যা অন্য কোনো দেশে চিন্তাও করা যায় না।’ হাজারো মানুষ এক সঙ্গে র্যালি করছে। মানুষের কল্যাণ কামনা করছে— বিষয়টা তার কাছে বিস্ময়কর লাগে। তিনি বাংলাদেশের শিল্পীসত্তাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেওয়ায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান দুই প্রফেসর।