তারেকের পাসপোর্ট বর্জন:ডাল মে কালা-
বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি নেতা তারেক জিয়ার বাংলাদেশী পাসপোর্ট বর্জন নিয়ে যখন তুলকালাম অবস্থা তখন তারেকসহ তার পরিবারের সবার পাসপোর্ট বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেয়ার বোমা ফাটালেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁর কথায় তারেকের পাসপোর্ট নিয়ে ডাল মে কালা-বেরিয়ে এলো। যদিও আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে স্বীকার করেছেন, তারেকের পাসপোর্ট বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেয়া হয়েছে।
এদিকে তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দেওয়া সংক্রান্ত কাগজ উপস্থাপন করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো কাগজে তারেক রহমানসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম রয়েছে। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে পাসপোর্টগুলো বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে চিঠিতে। চার বছর আগেই তিনি পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম।
তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে যখন নানা কথা বলা হচ্ছে তখন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানালেন, ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, ”আমরা সবাই জানি যে তারেক রহমান সাহেব বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন। তারপর এখানে দেশে বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা-মোকদ্দমা এবং বিনা বিচারে সাজা দিচ্ছে সে কারণে তিনি অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) চেয়েছেন এবং তাকে সেটা দেয়া হয়েছে।
অ্যাসাইলামের সময় নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।” আজ বিবিসি বাংলাকে তিনি এসব কথা বলেছেন। তার একথায় প্রমাণিত হয় তারেক রহমান অনেক আগে দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। তবে তিনি তিনি বুঝতে পারেননি কিভাবে পাসপোর্ট দূতাবাসে গেল!
বিবিসি জানায়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ে’ অবস্থান করছেন। বিএনপির তরফ থেকে প্রথমবারের মতো বিষয়টি স্বীকার করা হলো।তারেক রহমানের পাসপোর্ট বিতর্ক সামনে আসার প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়েছে।
২০০৮ সালে তারেক রহমান দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হবার পর বিএনপির তরফ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ সোমবার বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং তারেক রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল, মি: রহমান ব্রিটেনে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন।
মি:আলমগীর বলেন, আমরা সবাই জানি যে তারেক রহমান সাহেব বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন।তারপর এখানে দেশে বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা-মোকদ্দমা এবং বিনা বিচারে সাজা দিচ্ছে সে কারণে তিনি অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) চেয়েছেন এবং তাকে সেটা দেয়া হয়েছে। অ্যাসাইলামের সময় নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।তারেক রহমানের পাসপোর্ট বিতর্ক সামনে এনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন মি: আলমগীর।
মি: আলমগীর বলেন, যে কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে সাধারণত পাসপোর্টের মালিককে সেটি পরে ফেরত দেয়া হয়।কিন্তু তারেক রহমানের পাসপোর্ট কিভাবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে আসলো সেটা ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে মি: আলমগীর বলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যে চিঠি দেখিয়েছেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। এ চিঠিকে ‘রহস্যময়’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। এতো ভুলে ভরা একটা চিঠি ব্রিটিশ অফিস থেকে আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক নয়,” এ কথা উল্লেখ করে মি: আলমগীর বলেন,
সে চিঠিতে ব্রিটিশ অফিসের নাম শুদ্ধ করে লেখা হয়নি এবং চিঠিতে একটি স্বাক্ষর থাকলেও সেখানে কোন নাম নেই।ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এ ধরনের কোন চিঠি বাংলাদেশ হাই কমিশনকে দিয়েছে কিনা এবং পাসপোর্টগুলো বাংলাদেশ হাই কমিশনে গেল কিভাবে সে বিষয়টি আইনজীবীরা জানতে চেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা এবং তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি সামনে চলে আসার কারণে সরকার দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর জন্য তারেক রহমানের পাসপোর্ট বিতর্ক সামনে এনেছে।তারেক রহমানের পাসপোর্ট বিতর্ক নিয়ে বিএনপি কোন রাজনৈতিক চাপে পড়েনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বোমা ফাটালেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী-
এদিকে তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দেওয়া সংক্রান্ত একটি কাগজ উপস্থাপন করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো কাগজে তারেক রহমানসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম রয়েছে। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে পাসপোর্টগুলো বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে চিঠিতে। চার বছর আগেই তিনি পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তারেক রহমান অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। তার পরে তিনি পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন।’পাসপোর্টটি তিনি কোন অফিসে হস্তান্তর করেছেন সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন।’
এর আগে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিতে শনিবার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সবুজ পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন তারেক রহমান। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, সেই তারেক রহমান কিভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দেননি বলে দাবি করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, যে তথ্য প্রমাণ তারা চেয়েছিলো, নীচে দেয়া হলো। এই তথ্য আমি ২০১৫ এবং ২০১৭ তেও দিয়েছি। এতদিন পর তারা এটাকে অসত্য বলছে কেন তা বোধগম্য নয়। শুধু তারেক রহমান নয়, তার স্ত্রী এবং কন্যার পাসপোর্টও যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা আমাদের হাইকমিশনে ফেরত দিয়েছে ২০১৪ সালে। পাসপোর্টগুলো এখন সেখানেই রাখা আছে।