• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক


প্রকাশিত: ৯:১১ পিএম, ২৬ আগস্ট ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৬ বার

57-www.jatirkhantha.com.bdস্টাফ রিপোর্টার.ঢাকা:  তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিষয়ে আদালতে জবাব দিবে আইন মন্ত্রণালয়।এদিকে আইনজীবী ইউসুফ আলী আকন্দ ওই আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা বাতিল চেয়ে আইনসচিবসহ চার সচিবকে যে নোটিশ দিয়েছেন তা আইন মন্ত্রণালয় হাতে পৌঁছেছে। আইনমন্ত্রী নোটিশেরও জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আইনমন্ত্রী জানান, আইন মন্ত্রণালয় ওই আইনের ধারা দুটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনের ওই দুটি ধারাসহ অন্যান্য কোন ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা সেটা পর্যালোচনা করে এর পর এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে।

57-2আইনে কোন পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এখনই কোন পরিবর্তনের কথা বলতে পারবো না। আগে পর্যালোচনা করা হবে এরপর সেটা বিবেচনা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত  নেওয়া হবে। পর্যালোচনা করার আগে আমি এই ব্যাপারে এখনও কিছু বলতে পারছি না।

মন্ত্রী বলেন, আইসিটি আইন-২০০৬’র (সংশোধনী ২০১৩) ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। বুধবার বিকালে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টের সংশি­ষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন আইনজীবী শিশির মুনির।

এদিকে সংবিধানের তৃতীয় বিভাগে মৌলিক অধিকার, বিষয়ে  চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা ব্যাপারে বলা হয়েছে ৩৯ এ। সেখানে বলা হয়েছে ‘(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃক্সখলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং  (খ) সংবাদপত্রের  স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’

এদিকে আইসিটি আইনের ৫৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ­ীল বা সংশি­ষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’ (২) এ বলা হয়েছে ‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন সাত বৎসর কারাদন্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ড দন্ডিত হবেন।’

৮৬ ধারায় বলা হয়, ‘এই আইন বা বিধির অধীনে সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এ জন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক, উপনিয়ন্ত্রক, সহকারী নিয়ন্ত্রক বা তাদের পক্ষে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম নেওয়া যাবে না।’

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ও নোটিশদাতা আইনজীবী দুইজনই বলেছেন, আইনের ধারাগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আইনজীবী শিশির মুনির সাংবাদিকদের বলেছেন, একদিকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ কারাদন্ড ১৪ বছর ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও একই অভিযোগে পর্নগ্রাফি আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।  একই অপরাধে দুই ধরনের শাস্তির বিধান করে বৈষম্য করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই ধারার মাধ্যমে সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার পরিপন্থী ধারাও তৈরি করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এ দুটি ধারা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

সংবিধানের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারাগুলো সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে এখনই কোন কথা বলতে চাই না। আমি মনে করি আগে সংবিধানের সঙ্গে এই আইনের ধারাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। এরপর কি রিপোর্ট আসে কিংবা কি ধরা পড়ে সেটা বিবেচনা করেই আমাদেরকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’