ড.ইউনূস গ্রামীন ব্যাকের টাকা পাচার করেছেন-ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ
স্টাফ রিপোর্টার : নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো মালিকানা নেই বলে জানিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ। গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খতিয়ান ধ্বংস করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছে যা মানিলন্ডারিংয়ের আওতায় পড়ে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকালে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেন, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খতিয়ান হারিয়ে গেছে। ড. ইউনূস যাওয়ার আগে এসব ধ্বংস ও বিলুপ্ত করে গেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৫১-৫২টি। প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার এবং ঋণদাতা জনগণ। ড. ইউনূসের কোনো ধরনের মালিকানা বা শেয়ার নেই।
তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ শক্তি; এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড- এই তিনটি কোম্পানি থেকে ড. ইউনূসের চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৫১-৫২টি প্রতিষ্ঠান আছে, সবগুলোর চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। সেখানে তারই পছন্দ অনুযায়ী অল্প কয়েকজনকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এতগুলো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছেন পরিচালক পদে। এখান থেকে অনেক টাকা যেটা মানিলন্ডারিংয়ের আওতায় পড়ে। এটির অনেক আলামত আমরা পেয়েছি।গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা এক কোটি পাঁচ লাখ। আমরা যে কাজটি করছি সেটি তাদের আইনগত অধিকার রক্ষা করার জন্য বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক সাইফুল মজিদ বলেন, ড. ইউনুস কিন্তু চেয়ারম্যান ছিলেন না। তিনি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। সেই হিসেবে তিনি একজন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা ছিলেন। অথচ এই ৫১-৫২টি প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মকর্তা কীভাবে পরিচালক হলেন! এটি করতে অনুমতির প্রয়োজন হয়। গ্রামীণ কল্যাণ হয়েছে ১৯৯৬ সালে। তার দুই বছর পর তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। গ্রামীণ ব্যাংকে, টেলিকমে ড. ইউনুসের কোনো টাকা নেই। যেভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা খরচ করা হয়েছে সেটি গ্রামীণ ব্যাংকই করতে পারতো। সব মিলিয়ে ৪৪৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করা হয়।’
গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, ড. ইউনুস সব পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান এবং পরিচালক, তাদের শেয়ার নেই। কোনো মালিকানা নেই। মালিকানার জন্য উনি কোন টাকা দেননি। তাদের কেউই টাকা দেননি। প্রথম পরিচালনা পর্ষদে ৯ জন ছিলেন, তারা কিন্তু সবাই পূর্ণকালীন কর্মকর্তা ছিলেন। গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ শক্তিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মুনাফা করে বড় হয়েছে। কিন্তু এগুলো সবগুলোই ছিল অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ফরেন্সিক অডিট করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আকতার বলেন, যেহেতু এর আগে নথি ধ্বংস করা হয়েছে কিংবা গায়েব করা হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে আমরা দুই পক্ষের ঐক্যমতেই তালা লাগানোর বিষয়ে আলাপ করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে ড. ইউনুস সংবাদ সম্মেলনে নিজের প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করেছেন। উনি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা দাবি করছেন। একটি জায়গায় সারাদেশ, বিশ্ব খুব অন্ধকারের মধ্যে আছে। সেটি হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক কার? ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। যার সুবিধাভোগী হবে গ্রামের দরিদ্র, ভূমিহীন মানুষ। এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত, গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে, অবকাঠামো-জনবল ব্যবহার করে, এগুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এখানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই।’