ড.ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা ল্যাবে ৬টি নতুন ব্যবসা চালু
স্টাফ রিপোর্টার : ইউনূস সেন্টার আয়োজিত ৩২৯তম সামাজিক ব্যবসা ডিজাইন ল্যাব ২০ আগষ্ট ২০১৬ শনিবার গ্রামীণ ব্যাংক অডিটোরিয়াম কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী এই ল্যাবে যোগ দেন।
জানুয়ারী ২০১৩-এ ল্যাব শুরু হবার পর এ পর্যন্ত ৭,৫০০-র বেশী প্রকল্প ডিজাইন ল্যাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাদের মধ্যে ৭,৪০০টি প্রকল্প বিনিয়োগের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। এ সকল নবীন উদ্যোক্তা প্রকল্পে অনুমোদিত ইক্যুইটি ফান্ডের পরিমাণ প্রকল্প প্রতি ১.০ থেকে ৫.০ লক্ষ টাকা।
নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ডিজাইন ল্যাবে সভাপতিত্ব করেন। তিনি উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশে ও পৃথিবীর বিভিন্ন অন্যান্য দেশে সামাজিক ব্যবসার অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করেন।
সম্প্রতি রিও ২০১৬ অলিম্পিকে তাঁর অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কর্মসূচিতে সামাজিক ব্যবসার অন্তর্ভূক্তি বিষয়েও তাঁদের অবহিত করেন।
তিনি জানান যে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি প্রতিটি দেশে কর্মরত অলিম্পিক কমিটিগুলোর মধ্যেমে সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে নিয়ে যেতে ইউনূস সেন্টারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির এ বছরের বার্ষিক সমাবেশে প্রফেসর ইউনূস মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন যেখানে তিনি সমাজ পরিবর্তনে সামাজিক ব্যবসা ও খেলাধুলার সম্মিলিত ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ডিজাইন ল্যাবে গ্রামীণ ড্যানোন তার কর্মকাণ্ডের উপর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করে। উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সের অন্যতম বৃহৎ ডেইরী প্রতিষ্ঠান ড্যানোন এবং গ্রামীণ কর্তৃক যৌথভাবে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী গ্রামীণ ড্যানোন বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে প্রস্তুত দধি উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে। অনুষ্ঠানে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট তার পরিচালিত সামাজিক ব্যবসা ও নবীন উদ্যোক্তা প্রকল্পগুলোর উপরও একটি আপডেট উপস্থাপন করে।
এরপর আজকের ডিজাইন ল্যাবে ৬টি নতুন “নবীন উদ্যোক্তা” ব্যবসা পরিকল্পনা উপস্থাপিত হয়। উপস্থাপিত ব্যবসাগুলোর উদ্যোক্তাদের সকলেই গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা পরিবার থেকে আগত। উপস্থাপিত ব্যবসাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমিনা বেগমের “নিশবেতগঞ্জ সতরঞ্জি হস্তশিল্প।” আমিনা বেগম হস্তনির্মিত ঐতিহ্যবাহী সতরঞ্জি তৈরীতে বিশেষভাবে পারদর্শী এবং তিনি তাঁর ব্যবসাটি বড় করতে মূলধনী তহবিলের জন্য আবেদন করেন।
এর পরের প্রস্তাবনাটি ছিল মোফাজ্জল মন্ডলের “মোজাফ্ফর ক্লাসিক্যাল আর বাঁশী।” তাঁর দেশীয় বাঁশ থেকে বাঁশী তৈরীর দক্ষতা উপস্থিত সকলকে অভিভূত করে। তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও তিউনিশিয়ায় তাঁর বাঁশী রপ্তানী করছেন। তাঁর বাবা নিজে একজন প্রতিভাবান বংশী বাদক যিনি ডিজাইন ল্যাবের অংশগ্রহণকাীদের বাঁশী বাজিয়ে শোনান।
চম্পা রানীর “সৈকত বপ” মরচে ধরা স্টীলের সামগ্রী পরিস্কার করতে বিশেষভাবে তৈরী একটি পণ্য। পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে প্রস্তুত এই ভিন্ন ধর্মী পণ্যটি তৈরী ও বাজারজাত করে আত্ম-নির্ভর হবার স্বপ্ন নিয়ে চস্পা রানী নিয়ে ডিজাইন ল্যাবে তাঁর ব্যবসা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এছাড়া মোছাঃ মোর্শেদা খাতুন ও মোছাঃ ইশরাত জাহান চম্পা তাঁদের দর্জি ও গার্মেন্টস ব্যবসার জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সর্বশেষ উপস্থাপিত ব্যবসা পরিকল্পনাটি ছিল আফরোজা বেগমের “আফরোজা কুটির শিল্প” যা ফল ও সবজী বহনের জন্য হাতে তৈরী ঝুড়ি প্রস্তুত করে থাকে।
নবীন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর প্রকল্পগুলো অধিকতর পর্যালোচনার জন্য দলীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত প্রতিটি প্রকল্পই স্ব-স্ব দল কর্তৃক অর্থায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। গ্রামীণের সামাজিক ব্যবসা তহবিলের সাথে যৌথ-মূলধনী ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত এই সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পগুলো www.sociabusinesspedia.com –এ মনিটর করা হবে।
অধ্যাপক ইউনূস অংশগ্রহণকারীদেরকে তাঁদের উদ্ভাবনামূলক সামাজিক ব্যবসাগুলোর জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে, এটা চমকপ্রদ যে এত বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তিনি ২০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সামাজিক ব্যবসা ডিজাইন ল্যাবে যোগদানের জন্যও অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণ জানান।