• সোমবার , ৬ মে ২০২৪

ডেথজোন-মহাসড়কে লাশের কান্না থামছেনা


প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ২১ জুলাই ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৮ বার

death gone-2-www.jatirkhantha.com.bd লাবণ্য  চৌধুরী.ঢাকা:  সড়কের বেহাল অবস্থায় লক্কর ঝক্কড় বাস, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত ও বেপরোয়া গাড়ি চালনায়  ডেথজোন হয়ে উঠেছে মহাসড়ক। দেশের মহাসড়কগুলতে লাশের কান্না  যেন থামছে না। গত এক সপ্তাহে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৯২জন মারা গেছে। শুধু ঈদের ছুটিতে মারা গেছে ৭০ জন যাদের অধিকাংশই ঘরে ফিরছিলেন অথবা ঈদ শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে আসছিলেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মূলিবাড়িতে ১৮ জন নিহত হওয়ার পর ফের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ death gone-1-www.jatirkhantha.com.bdগেছে পাঁচজনের।বিআরটি’এর হিসেবে এবার ঈদে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে সাড়ে তিন লাখ বাস ও মিনিবাস চলাচল করেছে যাদের কোন ফিটনেস ছিলনা।এগুলো দেখার কোন কর্তৃপক্ষ ছিলনা।

সড়কের বেহাল অবস্থায় লক্কর ঝক্কড় বাস, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত ও বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে এধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।গত ২৩ জুন আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ফিটনেস ছাড়া কোনো প্রকার বাস, মিনিবাস ও সবধরনের যানবাহন চলতে দেয়া হবে না। কিন্তু ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।

dangerous-roads-www.jatirkhantha.com.bdঅদক্ষ চালক কিংবা মহাসড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই এমন চালকের হাতে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। একটি টিপ বেশি বা আরেকবার যাত্রী পরিবহনের জন্যে কম সময়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার একটা তাড়না থেকেও এধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।

ঈদের পর দিন গত রোববার সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে মুখোমুখি বাস সংঘর্ষে ১৮ জন মারা গেছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, সুনামগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফেনি, ফরিদপুর, গাজিপুর, টেকনাফ, নাটোর, নওগাঁ, মাদারিপুর, বরিশাল, বি বাড়িয়া, রাজবাড়ি ও নোয়াখালীতে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।

deth gone-3-www.jatirkhantha.com.bdঅভিযোগ রয়েছে, দক্ষ চালকের যেমন অভিযোগ রয়েছে তেমনি বেপরোয়া ও নিয়ম না মেনে গাড়ি চালালেও পুলিশ, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এধরনের দুর্ঘটনার পরও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। লক্কর ঝক্কর বাস পরিচালনার সঙ্গে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অংশীদার বাণিজ্যে জড়িত এমন অভিযোগও রয়েছে। পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই এধরনের বাতিল ও  ত্রুটিপূর্ণ  যানবাহন বছরের পর বছর চলছে এবং তা একাধিক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আবার এধরনের চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিভিন্ন অজুহাতে সড়কে পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া বা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দায়ী ব্যক্তিরা ছাড় পেয়ে যায় বলে নির্বিঘ্নে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও  ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া এবার ঈদের কারণেই টানা বৃষ্টিপাতের কারণেও রাস্তা পিচ্ছিল ও খানা খন্দে ভরা থাকায় অনেক সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনা ঘটে।

টাউন সার্ভিসে বিভিন্ন কোম্পানির  ত্রুটিপূর্ণ বাসগুলো দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে দিব্যি চলাচল করছে। অথচ আন্ত:মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় সড়ক থেকে এধরনের  ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি আটক বা সরিয়ে ফেলা হবে। অথচ ঈদের আগের দিন ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে যে দীর্ঘ যানজট লাগে তা ষোল ঘন্টারও অধিক সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না কারণ ও মহাসড়কে অন্তত ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তারওপর বা পাশে খাদেই বাসগুলো উল্টে পড়েছিল। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আবার দক্ষ চালক কিন্তু বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এমন নজিরও বহু। কুমিল্লা এলাকায় যেমন তিশা বা এশিয়া লাইন কোম্পানির গাড়ির চালকদের বদনাম আছে তেমনি উত্তরবঙ্গে হানিফ বা শ্যামলী পরিবহনের গাড়ি চালকদেরও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দুর্নাম কম নয়। এধরনের নামিদামি কোম্পানির গাড়ির চালকরা অনেক সময় রাস্তায় গাড়িচালনার ক্ষেত্রে নিজেদের একধরনের আধিপত্য বজায় রেখে চলেন এবং তারা যা করেন তাই নিয়ম বলে বিবেচিত করতে অন্য চালক বা পুলিশ অথবা সড়ক নিয়ন্ত্রণ যারা করেন তাদের তা মানতে বাধ্য করেন।

বিআরটি’এর হিসেবেই এবার ঈদে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে সাড়ে তিন লাখ বাস ও মিনিবাস চলাচল করেছে যাদের কোনো ফিটনেস নেই। এর পাশাপাশি খোদ রাজধানীতে ৯৪ হাজার ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন চলছে যা দূর করতে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঙ্কার পর্যন্ত দিয়েছেন।

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিউট বলছে ৪৯ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বাসের কারণে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের কোনো লাইসেন্স না থাকা।

অন্তত ৬১ ভাগ চালকের লাইসেন্স অবৈধ। তারা সড়ক ও মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে যাদের ধরার ক্ষমতাও নেই পুলিশের। পুলিশের তথ্যে বলা হচ্ছে ৮৩ ভাগ চালক দুর্ঘটনার পর পলাতক থাকে। ঈদের আগে কিংবা পরে যখনই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে পুলিশ কখনোই চালককে গ্রেফতার করতে পারে না। এসব চালকের অধিকাংশের কোনো বৈধ লাইসেন্স থাকে না আর তারা যেসব গাড়ি চালান তাও ত্রুটিপূর্ণ।

১৮ জনের রক্তের দাগ না শুকাতেই ফের লাশ…

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মূলিবাড়িতে সোমবার ১৮ জন নিহত হওয়ার পর ফের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের ওই এলাকায় বাসের চাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হন।

দুর্ঘটনায় নিহত চারজন একই পরিবারের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁর নাম রোজিনা খাতুন (১৬)। বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বামনগাতি গ্রামে। দুর্ঘটনায় আহত একজনকে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলালউদ্দীনের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজশাহীগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশায় থাকা পাঁচজন নিহত হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন চারজন। চালকসহ গুরুতর আহত দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানে চালক মারা যান। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।ঈদের পরদিন গত রোববার ভোর পাঁচটার দিকে এই মূলিবাড়িতেই দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হন।