ডিএসসিসি’র মৃত্যুদূত ময়লার গাড়ি-৩ বছরে গাড়িচাপায় ১৩ খুন
বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে উঠেছে। গত তিন বছরে এই ময়লার গাড়ি কেড়েছে ১৩ প্রাণ। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেপরোয়া ময়লার গাড়ি কেড়ে নিয়েছে আরও এক মেধাবী স্কুলছাত্রের প্রাণ। নিহত মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মদিনাবাগ বাজার এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় মাহিন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় অন্তত ১৩ জনের প্রাণ গেছে। ঘটনার পর গতকাল নিহত শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদের বাসায় যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের পাশে থাকার এবং দুর্ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত চালক গাড়িটি চালাচ্ছিলেন না। অন্যকে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাসুম মিয়ার ছেলে মাহিন। পরিবারের সঙ্গে মুগদা মামা ভাগিনা গলি এলাকায় একটি বাসায় থাকতো সে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মাহিন মেঝো।
তার বড় ভাই মাহফুজ আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মাহিন বাসা থেকে বেরিয়ে এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিল। এ সময় মদিনাবাগ বাজার এলাকায় সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় সে। খবর পেয়ে তাকে প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে তাকে ঢামেকে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২ টায় মারা যায় সে। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
তিন বছরে ১৩ জনের প্রাণহানি : গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় অন্তত ১৩ জনের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ি চাপায় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। পরদিন ২৫ নভেম্বর দুপুরে পান্থপথ এলাকায় সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যু হয়। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈমের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়িচাপায় ২০২৩ সালের ৬ মার্চ মারা যান আবু তৈয়ব (২৬) নামের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। ২০২২ সালে ময়লার গাড়ি দুর্ঘটনায় অন্তত চারজন মারা যান। ওই বছরের ২ এপ্রিল খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাসরিন খানম নামের এক নারী নিহত হন। ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর উড়াল সড়কের কাছে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় শিখা রানী ঘরামির মৃত্যু হয়।
তিনি ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন।একই বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে ময়লার গাড়ির চাপায় সাব্বির আহমেদ নামের এক তরুণ নিহত হন। ওই বছরের ৩১ মে রাতে মুগদার টিটিপাড়া মোড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নাজমা বেগম নামে এক পথচারী নারী নিহত হন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় ২০২১ সালে সাতজন নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দয়াগঞ্জ মোড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) টেলিফোন বিভাগের কর্মী খালিদ। এপ্রিল মাসে যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচায় দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন এক রিকশাচালক। তখন ক্ষুব্ধ লোকজন ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
এছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে শাহজাহানপুর এলাকায় ময়লার গাড়ির চাপায় একজন এবং ৯ আগস্ট শ্যামপুরের দোলাইরপাড় এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানার এক কর্মী নিহত হন। নভেম্বরে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রাণ হারান নাঈম হাসান ও আহসান কবির খান। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ারী এলাকায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় স্বপন কুমার সরকার নামের আরেকজন নিহত হন।