টি ২০ বিশ্বকাপে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ-কপিল
স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের আরেকটি বৈশ্বিক আয়োজনে ক্রিকেটের সব সেরাকে দেখে ভালো লাগছে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপ ছিল আয়োজক হিসেবে ভারতের সক্ষমতা দেখানোর প্রথম ধাপ। ১৯৯৬ ও ২০১১ বিশ্বকাপে দেখিয়েছি আমাদের ধারাবাহিক উন্নতি।আমরা শুধু অংশগ্রহণকারীই নই, শিরোপার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীও—সফল আয়োজনের জন্য এটি খুব প্রয়োজন। বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা আয়োজনে আমাদের ধারেকাছে কেউ নেই।ভারতে আরেকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মেলা আমাকে একটু স্মৃতিকাতরই করে তুলছে।বিশ্বকাপের বাছাইপর্বই দেখিয়ে দিল, পুরো বিশ্বেই ক্রিকেটের আবেদন কতটা বেড়েছে।
আমি জানি, ইউরোপ ও এর আশপাশের দেশগুলোয় ক্রিকেট বিস্তৃত হতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একটি নতুন মানদণ্ড সৃষ্টি করবে।বদলে যাওয়া ক্রিকেট-বিশ্বে ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণ সব দলকেই এগিয়ে যাওয়ার সমান সুযোগ দিচ্ছে। ১৯৮৩ সালে কেউ বিশ্বাস করেনি যে আমরা বিশ্বকাপ জিতব। সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলাম আমরা। আমার ধারণা, এবারও সব দলেরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ আছে।
পাকিস্তানকে নিয়ে এবার সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বোলিং দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার শক্তি অবশ্য তাদের ব্যাটিং। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম থাকলে নিউজিল্যান্ডের সুযোগ আরেকটু বাড়ত। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা তো সব সময়ই ভালো কিছুর আশা দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভালো দল, তবে বাংলাদেশ কিন্তু ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
ছোট সংস্করণে বাংলাদেশ যখন পূর্ণ সদস্যদের হারায় আমি তখন অবাক হই না। তারা অনেক উন্নতি করেছে। ইদানীং শ্রীলঙ্কার দুর্দশা দেখে খারাপ লাগছে। আর বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তি ক্রিকেটকে দিচ্ছে বাড়তি কিছু।আগের টুর্নামেন্টগুলো জিতেছে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। এবার ইডেন গার্ডেনে কি আমরা টি-টোয়েন্টির নতুন কোনো রাজাকে দেখব? হতেই পারে।
ভারত অবশ্য অনেক এগিয়ে আছে। এ দলটি সেরা সব খেলোয়াড়ে ভর্তি। এর আগে অন্য কোনো দলকে এতটা শক্তিশালী ও শিরোপার দাবিদার মনে হয়নি। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলটিও এত শক্তিশালী ছিল না। তবু দলটিকে সতর্ক থাকতে হবে, টি-টোয়েন্টিতে একবার পিছিয়ে পড়লে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ খুব কম।
এই বিশ্বকাপ ভারতেরই জেতা উচিত। ভারতের শক্তি দুর্দান্ত দুই স্পিনার (হরভজন ও অশ্বিন) এবং দুজন পরীক্ষিত অলরাউন্ডার (যুবরাজ ও রায়না)। বেশ ভালো একটি পেস বোলিং ইউনিট আছে, এদের মধ্যে জসপ্রীত বুমরাই ভয়ংকরতম। একটু অপ্রথাগত পেসারটি দীর্ঘ সময়ের জন্যই থাকতে এসেছে। হার্দিক পান্ডিয়া ভালো অ্যাথলেট। রবীন্দ্র জাদেজা দলে থাকা মানেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট। আর কোহলি, রোহিত কিংবা ধোনির মতো খেলোয়াড়দের ব্যাপারে কিছু বোধ হয় বলার দরকার নেই।
ধোনি যুবরাজকে ভালোভাবে ব্যবহার করবে এ আশা করি। তাকে দিয়ে বোলিং করাতে হবে, তবে কোনো চাপ না নিয়ে তাকে ব্যাটিংও করতে দিতে হবে। ধোনি গত কিছুদিন ব্যাট হাতে ভালো করছিল না, কিন্তু অবশেষে সে ফিরে এসেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কখনো না জেতার রেকর্ডটা আজ ভেঙে দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করা উচিত ভারতের।টি-টোয়েন্টিই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। এ সংস্করণটি থাকতেই এসেছে। এটি অনস্বীকার্য যে টেস্ট ক্রিকেটই সেরা কিন্তু সাধারণ মানুষ, তরুণ কিংবা বৃদ্ধরা এখন টি-টোয়েন্টিতেই মজেছে।
টি-টোয়েন্টি যেসব নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, সেগুলো বুঝতে আমার নিজেরই সময় লেগেছে। আমি পছন্দ করি বা না করি তাতে কিছু এসে যায় না। মানুষ চায় দল বেঁধে স্টেডিয়ামে গিয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে। খেলাটি যে অবিশ্বাস্য অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটিও সংক্রামক।এই টুর্নামেন্ট সবাইকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নাকি দেখবে ১৫০টি দেশের লোক। ক্রিকেটে এর চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তো আর হতে পারে না!