টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের নয়া খান সভাপতি ফারুক-সম্পাদক জোয়াহেরুল
জেলা প্রতিনিধি. টাঙ্গাইল : জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পর আধিপত্য হারাল ‘খান পরিবার’ ও ‘সিদ্দিকী পরিবার’। আজ রোববার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ওই দুই পরিবারের বলয়ের বাইরে থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। আজ সকালে টাঙ্গাইল আউটার স্টেডিয়ামে সম্মেলনে ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি এবং জোয়াহেরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ আগেই দল থেকে বহিষ্কার করে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকেও বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর ভাইয়েরা নিজ দলের নেতাকে হত্যার অভিযোগের কারণে পলাতক থাকায় এই পরিবারও আধিপত্য হারায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাংসদ আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশে হত্যা ও ধ্বংসের রাজনীতি করছেন। এই দেশের শান্তি প্রিয় মানুষের জান মাল রক্ষার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা যা যা করা দরকার, তাই করবেন। তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, শেখ হাসিনার অর্জনগুলো বিসর্জনে পরিণত হয়—এমন কাজ কেউ করব না। হাতে গোনা মতলববাজ দুই-এক জন যারা এসব কাজ করে, আসুন আমরা তাদের পরিত্যাগ করি।’
প্রথম অধিবেশন শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিকেলে সার্কিট হাউসে জেলা কমিটি এবং বিভিন্ন উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘সম্মেলনের ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে।’
এ সময় দুই-একজন এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ভোটের দাবি জানান। পরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি এবং বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়।
ফজলুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা। বিগত কমিটিতে তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় সভাপতি ছিলেন খান পরিবারের সদস্য শামসুর রহমান খান। অবশ্য কয়েক বছর আগে সভাপতি মারা যান। কিন্তু তাঁর চার ছেলেই মূলত আধিপত্য ধরে রাখছিলেন। বিশেষ করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বহিস্কার করার পর খান’রাই জেলার রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে। কিন্তু ফজলুর রহমান খান ‘খান পরিবারের’ পক্ষে সেভাবে কখনো অবস্থান নেননি। এ জন্য ‘খান’ পরিবারের পছন্দ ছিল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর মেনুকে। তাঁকে দুটি পদের যে কোনো একটিতে নির্বাচিত করতে চেষ্টা ছিল খানদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
আর কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কারের পর তাদের অনুসারী ও ভাইয়েরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এমনকি কালিহাতীতে লতিফ সিদ্দিকী আসনে উপনির্বাচনেও তাঁর অনুসারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত জোহায়েরুল ইসলাম প্রকাশ্যে খানদের বিরোধী ছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যার জন্য খানদের দায়ী করে তাদের বিচারের দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন তিনি।