• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

টাকার ঘাটতি-কাহিল পাঁচ ইসলামী ব্যাংক


প্রকাশিত: ১১:৫৫ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২৩ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪০ বার

টাকার ঘাটতি মেটাতে কাহিল অবস্থায় পড়া এসব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে

লাবণ্য চৌধুরী : টাকার ঘাটতিতে কাহিল দশা ৫ ইসলামী ব্যাংকের। শরিয়াহভিত্তিক এই পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। দেশের শরিয়াহভিত্তিক এই পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তাদের আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর হিসেবে চলতি হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়। মূলত আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এ বিধানের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়। উল্লেখিত পাঁচ ব্যাংকের কোনটি নির্দিষ্ট হারে সিআরআর রাখতে পারছে না।

টাকার ঘাটতি মেটাতে কাহিল অবস্থায় পড়া এসব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক। বিষয়টি বারবার অবহিত করার পরও ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০ দিনের মধ্যে চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয় না করা হলে ক্লিয়ারিং বা নিষ্পত্তি ব্যবস্থা থেকে ব্যাংকগুলোকে বিরত রাখা হবে। যেসব ব্যাংককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। গত ২৮ নভেম্বর ব্যাংক পাঁচটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক থাকলেও এসব ব্যাংককে এখন নিয়মিত টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনো গ্রাহক তাঁদের জমানো টাকা তুলতে ব্যর্থ না হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বছর ধরে টাকার সংকটে বা তারল্যসংকটে ভুগছে ইসলামি ধারার এ পাঁচ ব্যাংক। এসব ব্যাংকে আমানত বাড়লেও চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখছে না। ফলে নিয়মিত দণ্ড সুদ বা জরিমানা গুনতে হচ্ছে। আবার এই জরিমানার টাকাও দিচ্ছে না কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সরাসরি কোনো কথা বললেও তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্নভাবে টাকা ধার নিচ্ছে। এরপর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারল্য জমা রাখতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পদক্ষেপ নিবেই। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত সমস্যা আছে, এ জন্য কয়েকটি ব্যাংককে নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের সঙ্গে একটি চলতি হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। এই হিসাব থেকে সব লেনদেন নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সিআরআরের টাকাও থাকে এই হিসাবে।
ব্যাংক পাঁচটিকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মতিঝিল কার্যালয়ের ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বিভাগে রক্ষিত আপনাদের চলতি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন লেনদেন নিষ্পত্তি, যেমন চেক ক্লিয়ারিং সেবা (বিএসিপিএস), অনলাইন অর্থ স্থানান্তর (বিইএফটিএন), এটিএম ও ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে সেবা গ্রহণ (এনপিএসবি) ও তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তর (আরটিজিএস) সেবার লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনাদের চলতি হিসাবের স্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে চলতি হিসাবের স্থিতি দীর্ঘদিন যাবৎ ঋণাত্মক, যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পত্রপ্রাপ্তির ২০ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের পরামর্শ প্রদান করা হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সম্পাদিত ‘লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ’ চুক্তি অনুযায়ী সব বা নির্দিষ্ট কোনো নিষ্পত্তি ব্যবস্থা থেকে ব্যাংকগুলোকে বিরত রাখা হবে। অর্থাৎ এই পাঁচ ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং, এটিএম ও অনলাইন ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, গত বুধবার পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংক এই হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয় করেনি।

এ সম্পর্কে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। একইভাবে অন্য চার ব্যাংকের এমডির সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের কেউই ফোন ধরেননি। এমনকি মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও কোনো সাড়া দেননি।