• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘জোরপূর্বক’ জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধার সরকারের ‘না’


প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ১৭ মার্চ ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৫ বার

কূটনৈতিক রিপোর্টার : এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে যাওয়ার পর জিম্মি নাবিকদের ‘জোরপূর্বক’ উদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী প্রস্তাবকে ‘না’ বলেছে বাংলাদেশ। নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে সেই প্রস্তাবে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে অবসরপ্রাপ্ত এই রিয়ার অ্যাডমিরাল এ কথা জানিয়ে বলেন, এমভি আব্দুল্লাহকে ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ সোমালিয়ার সশস্ত্র জলদস্যুরা কব্জায় নেওয়ার পর ভারত মহাসাগরে দস্যুতা প্রতিরোধে কাজ করা সব পক্ষকে জানিয়েছে সরকার।

ভারতীয় জাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টারও গিয়েছিল অবস্থানটা দেখার জন্য। কাছাকাছি ছিল ইউরোপীয় নেভির একটা জাহাজ। সেই জাহাজটিও আবদুল্লাহকে অনুসরণ করতে শুরু করে।তিনি বলেন, তারা একটা প্রস্তাবও এই রকম দিয়েছিল, আমরা জোরপূর্বক জাহাজে উঠে এটাকে উদ্ধারের চেষ্টা করব কি-না।

সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে খুরশেদ আলম বলেন, আজ পর্যন্ত জোরপূর্বক জাহাজে উঠে সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা বা নৌবাহিনী দ্বারা কাউকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি।এখানে হতাহতের আশঙ্কা থাকার কারণে আমরা এবং বিশেষ করে মালিকপক্ষ বলছে যে, ‘না, শান্তিপূর্ণভাবে অতীতে যেভাবে এটা সমাধান হয়েছে, সেভাবে আমরা সমাধান করব।’

সেই পথেই আমরা এগোচ্ছি। এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ এস আর শিপিংয়ের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বলেন, জিম্মি নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য যা যা সম্ভাব্য করণীয় তা করতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনীও। তাদের প্রকাশ করা এ ছবিতে এমভি আবদুল্লাহর বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র জলদস্যুদের দেখা যাচ্ছে।মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।

জাহাজটি জলদস্যুদের হাতে যাওয়ার পর সেটির নজরদারিতে ইউরোপীয় নৌবাহিনীর অপারেশন আটালান্টা এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর তৎপরতার খবর এসেছে।জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও জাহাজ ছাড়িয়ে আনার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না মালিকপক্ষ। দস্যুদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টাও করছে তারা।১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। তবে গত পাঁচ দিনেও জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সূত্রের দেখা পায়নি কবির গ্রুপ।

এমবি আব্দুল্লাহ এবং নাবিকদের উদ্ধারে অতীতে এমবি জাহান মণি এবং আরেকটি জাহাজের ৭ বাংলাদেশি নাবিককে ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা বলছেন সচিব খুরশেদ আলম। ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার এমবি আলবেদো জাহাজের সাত বাংলাদেশি নাবিককে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধারে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি।খুরশেদ বলেন, যেভাবে আমরা আগের কাজটা শেষ করছি, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাচ্ছি।অপহরণ করা জাহাজ ও নাবিক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জলদস্যু, প্রি-নেগোসিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিএনএ) ক্লাব এবং মালিকপক্ষ মিলে দরকষাকষির মূল কাজ করে বলেও জানান তিনি।

পিএনএ ক্লাবের মধ্যস্থতায় ২০১১ সালে নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি উদ্ধারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পিএনএ ক্লাবের একজন নেগোশিয়েটর থাকে, জাহান মণি তারা নেগোশিয়েট করে, আমরা অবজার্ভ করি।জিম্মি নাবিকদের সুস্থভাবে উদ্ধারের সব চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে করে আমাদের নাবিকদেরকে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে এবং জাহাজটিও অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে পারি।

কী প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছি বা কীভাবে করছি, সেটি আসলে জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিষয় নয়।খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে এটি নিয়ে অতি মাতামাতি হলে যেটি হচ্ছে, তারা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এগুলো দেখছে, দেখার পর যারা হাইজ্যাক করেছে, তারা এটির মূল্যমানটা ঠিক করছে।এটি যত বেশি মিডিয়া কাভারেজ এবং যত বেশি গুরুত্ব পাবে, তত বেশি তারা এক্ষেত্রে তারা তাদের অবস্থানকে দৃঢ় করবে। এটি আগেও হয়েছে। সুতরাং আমি সবাইকে অনুরোধ জানাব, এ নিয়ে সতর্কভাবে রিপোর্ট করার জন্য।