• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

জিনের বাদশা সেজে ২ হাজার সিন্ডিকেটের জমজমাট প্রতারণা


প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ৮ মার্চ ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫৮ বার

jjjnবিশেষ প্রতিনিধি  :  জিনের বাদশা সেজে জমজমাট প্রতারণা চলছে সারা দেশব্যাপী। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ঢাকা থেকে কাচিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত জীনের নেটওয়ার্কে রয়েছে কমপক্ষে চিহ্নিত দুই হাজার ব্যক্তি। এ সিন্ডিকেট একসময় j--ছিল নিস্ব।এখন ওরা কোটিপতি।

পুলিশ জানায়, এক বছর আগেও রিকশা চালিয়ে যে সফিজল সংসার চালাত। তার ছেলে মো. শাহীন শ্রমিকের কাজ করত। আবার মাঝে মাঝে রিকশা চালাত। জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা ব্যবসা করে আজ সে কোটিপতি। ভোলার বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া এলাকার ৪নং ওয়ার্ডে রয়েছে বিশাল বাংলোটাইপ বাড়ি। ঢাকায় রমরমা ব্যবসা। ফ্ল্যাট বাড়ি।

দেশব্যাপী জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় পুলিশের অভিযানে ইউনিয়ন পরিষদের দুই চৌকিদার ও জিনের বাদশার সেকেন্ডইন কমান্ড রুবেল এবং শাহীন গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচনায় আসে এদের উত্থান। বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কাচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদক আবদুর রব কাজী জানান, ঢাকা থেকে কাচিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত জীনের নেটওয়ার্কে রয়েছে কমপক্ষে চিহ্নিত দুই হাজার ব্যক্তি। তারা সবাই একসময় অতি সাধারণ ঘরের সন্তান ছিল। এখন অঢেল টাকার মালিক। ঢাকায় রয়েছে প্রধান কার্যালয়। তবে প্রধান কার্যালয় থেকে প্রথমে প্রতারণা করা হয় না। জিন সেজে প্রতি রাতে প্রতারণার আjnসর বসে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে।

পুলিশও জানায় একই কথা। ঢাকা অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি নেতা শেখ সাদি হাওলাদার। জিনের বাদশা সেজে তিনি ও তার ভাই আজাদ কয়েক বছরে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান। শেখ সাদি এখন সরাসরি ওই ব্যবসা না করলেও তার ভাই নিয়ন্ত্রণ করছে ওই ব্যবসা। তবে ওই ব্যবসার পাশপাশি আজাদের রয়েছে জ্বালানি তেলের ব্যবসা।

কুঞ্জেরহাট বাজারে রয়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মার্কেট ও ব্যবসায়িক ভবন। এদের হাত ধরেই জিনের আসরের সম্রাট হয়ে ওঠে জুয়েল মাতব্বর ও তার ভাই রুবেল মাতব্বর। একসময় বিএনপিদলীয় ক্যাডার ছিল। তারা এখন কোটিপতি। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা সদরে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জিনের বাদশা সেজে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া মামলায় জুয়েল গত মাসে গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে রয়েছে। এদিকে এবার পুলিশের অভিযানে ৫ জন গ্রেফতার হওয়ার পর অন্যরা গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি অসীম কুমার সিকদার জানান, এ অঞ্চলে এত বড় একটি প্রতরক চক্র থাকলেও এদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ না আসায় এতদিন তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। সর্বশেষ ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা নাজিয়া ইসলাম পারুল গত রোববার বাদী হয়ে চিহ্নিত ৩০ জন ও অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করে বোরহানউদ্দিন থানায় প্রতারণা মামলা দেন।

ওই মামলায় গতকাল পর্যন্ত ৫ জন আটক হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে সংসারে শান্তি এনে দেবে এমন নানা প্রতারণা করে জিনের বাদশা সেজে তার কাছ থেকে কয়েক বারে ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জুয়েল ও রুবেল মাতাব্বর গ্রুপ। জুয়েলকেও এ মামলার গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কুঞ্জেরহাটের বাড়ি থেকে আটক হয় রুবেল ও শাহীন।

এছাড়া কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদেও চৌকিদার মো. জুয়েল হোসেন ও মো. সিরাজ উদ্দিন তাদের সোর্স হিসেবে কাজ করায় তাদেরও আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, শাহীনের বিরুদ্ধে এর আগে চাঁদপুরে দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলা সিআইডি তদন্ত করছে। স্থানীয়রা জানান, এর আগে ভোলার ডিবি পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করলেও রাতের মধ্যে অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দেয়। ফলে তারা এলাকায় ফিরে এসে বহাল তবিয়তে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।

ওসি অসীম আরও জানান, একটি টিভি চ্যানেলে তারা জিনের বাদশার মাধ্যমে মুশকিল আসান নামে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। ওই সব ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এছাড়া বড় বড় পত্রিকায়ও তারা নানা নামে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। স্থানীয়রা এ প্রতারণায় পা না দিলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

গভীর রাতে তারা ফোন করে জিনের আসরের কথা জানান দেন। সরল বিশ্বাসে মানুষ তা বিশ্বাস করে প্রতারণার ফাঁদে পা দেন। স্বামী-স্ত্রী’র অমিল, ব্যবসায় লোকসান, সন্তান না হওয়া, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, দীর্ঘদিন রোগে ভোগা , স্বামীর পরকীয়া প্রেম ঠেকাতে, এমন নানা বিষয় তুলে ধরেই তারা ফাঁদ পাতে।

বর্তমানে কাচিয়া ইউনিয়নের ৪নং, ৫, ৬নং ওয়ার্ডে বেশ কিছু যুবক এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে রতনের ছেলে রুবেল, নুসুর ছেলে হারুন, লোকমান, আকবর লাট রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ ম্যানেজার রেখে তাদের দিয়ে প্রতারণা করাচ্ছে। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আগের চেয়ারম্যানের কারণে এতদিন অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।

তার এলাকার বদনাম ঢাকতে তিনি উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক সাহায্য চান। যারা আটক বা গ্রেফতার হচ্ছে তারা যেন বের হয়ে আসতে না পারে তার দাবিও জানান। তবে বিএনপি নেতা শেখ সাদি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও স্থানীয়রা বলছেন ঘটনা সত্য। স্থানীয় পুলিশসহ বিভিন্নমহলকে ম্যানেজ করে, মাসোয়ারা দিয়ে চলে জিনদের প্রতারণা ব্যবসা।