• শনিবার , ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত


প্রকাশিত: ১১:১১ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৭ বার


আন্তজার্তিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ ব্যর্থতার জন্য পরিষদের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তির নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। গুতেরেস বলেছেন, সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

কাতারে দোহা ফোরামে অংশ নিয়ে আজ রোববার এ মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এক দিন আগেই গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ সদস্যই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। তবে স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় শেষ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখেনি।

দোহায় দেওয়া ভাষণে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ‘ভূকৌশলগত বিভক্তির কারণে পরিষদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ হয়ে পড়েছে। এ বিভক্তির কারণে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে জাতিসংঘের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন অঙ্গীকার করে গুতেরেস বলেন, গাজা পরিস্থিতির এত দ্রুত অবনতি হচ্ছে যে তা ‘বিপর্যয়ের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব এমন হবে যে ফিলিস্তিনিরা হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। গাজা সংঘাত এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে।

এর আগে গত ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। কাতারসহ কয়েকটি পক্ষের মধ্যস্থতায় এটি সম্ভব হয়েছিল। দোহা ফোরামে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাতার যুদ্ধবিরতি নিয়ে যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, হামাস বা ইসরায়েল ততটা দেখাচ্ছে না।

নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত শনিবার বলেছেন, হামাস নির্মূল করতে তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। একই ইঙ্গিত দিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভি বলেছেন, গাজায় আরও শক্তি প্রয়োগ করবে তাঁর বাহিনী।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও সেনা প্রধানের এমন বক্তব্যের পর আজ রোববার দক্ষিণ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাস জানিয়েছে, দক্ষিণে খান ইউনিস এলাকায় ‘তীব্র সহিংসতাপূর্ণ অভিযান’ চালিয়েছেন ইসরায়েলের সেনারা। সেখানকার নাসের হাসপাতালে হতাহত মানুষকে দেখা গেছে। খান ইউনিস থেকে মিসর সীমান্তে রাফাহ এলাকাগামী সড়কেও হামলা হয়েছে।

মধ্য গাজার বাসিন্দারাও সংঘাতের খবর দিয়েছেন। এ এলাকার বুরেইজ ও মাঘাজি শরণার্থীশিবিরে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুরেইজ শিবিরে ইসরায়েলের এক বিমান হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকাটিতে ১৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের ৪০ শতাংশেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জাকি হানেগবি জানিয়েছেন, গাজায় তাঁরা অন্তত সাত হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। তবে কীভাবে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।

গাজায় শুধু হতাহত মানুষই নয়, দিন দিন বাড়ছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের সংখ্যাও। গত শুক্রবার গাজার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ। পরে তিনি জানিয়েছেন, গাজার অর্ধেক মানুষ অভুক্ত থাকছেন। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই।

এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে কার্ল স্কাউ আরও বলেন, প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তার সামান্যই গাজায় ঢুকতে পারছে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই প্রতিদিন খাবার জোটে না। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গাজার পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ পৌঁছানো ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে।

এখন গাজায় মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খোলা রয়েছে। এই ক্রসিং দিয়ে সীমিত গাজায় ত্রাণ ঢুকছে। শনিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় যত বেশি সম্ভব ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে সব রকমের চেষ্টা চলছে।