‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শেষমেষ আমাকেই দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন-’
শফিক আজিজ.ঢাকা:
আসন্ন ডিসিসি’র দুই মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কে সমর্থন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। যদিও দক্ষিণের মেয়র পদের জন্যে ইতিমধ্যে সাঈদ খোকনকে এবং উত্তরের মেয়র পদের জন্যে আনিসুল ইসলামকে শেখ হাসিনা মুখে মুখে মনোনয়ন দিয়ে ফেলেছেন।কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বিএনপির হাবিবুন নবী সোহেল, আবদুস সালাম এর শক্ত প্রার্থীর নাম উঠে আসায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে।
এক্ষেত্রে পুরনো ঢাকার অনেকের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছেন হাতি মার্কার সেই জনপ্রিয় প্রার্থী হাজি সেলিম।পুরনো ঢাকায় খোঁজ নিয়ে একাধিক বাসিন্দা ও পঞ্চায়েতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজি সেলিম সাঈদ খোকনের চেয়েও জনপ্রিয়।
কিন্তু হাজি সেলিম কে এখনও কোন আশ্বাসের বানি দেয়া হয়নি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।তবে হাজি সেলিম আশাবাদি বলে জানিয়েছেন।
দৈনিক জাতিরকন্ঠকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, আমি আশাবাদি জননেত্রী শেখ হাসিনা শেষমেষ আমাকেই দক্ষিণের মেয়র পদের জন্যে নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন। কারণ, সভানেত্রী আমার ভোট ব্যাংক সম্পর্কে অবহিত আছেন, তাছাড়া পুরনো ঢাকার বাসিন্দারা আমাকে যেভাবে পছন্দ করেন এবং ভালবাসেন অন্য কাউকেই তাঁরা সেভাবে পছন্দ করেন না।আর সে কারণে আমি আশাবাদি জননেত্রী শেখ হাসিনা শেষমেষ আমাকেই দক্ষিণের মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেবেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করব। আমি যেন মেয়র পদে নির্বাচন করি পুরান ঢাকাবাসী এব্যাপারে জোর দাবি জানাচ্ছে। হাজী সেলিম বলেন, ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে আমি মেয়র পদে নির্বাচন কবর।
হাজী সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি পুরান ঢাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এর আগে যখন ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন আমি মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। এর পর নির্বাচন হয়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন পায়নি। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। এখন এলাকাবাসি দাবি জানাচ্ছে আমি যেন এমপি পদ ছেড়ে মেয়র পদে নির্বাচন করি। তাই আমি মেয়র পদে নির্বাচন করব।
হাজী সেলিম বলেন, নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের কারও মতামত নিয়ে তাকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়নি। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা এখন আমার কাছে ছুটে এসেছে। তার ব্যবসায়ীক কার্যালয়ে দেখা গেল লালবাগ, কোতোয়ালী, সুত্রাপুর, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জড়ো হয়েছে। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঈদ খোকনকে আমরা আপদে-বিপদে কখনই কাছে পাই না। লালবাগের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যখন শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিল তখন সাঈদ খোকনের চেহারাও আমরা দেখিনি। প্রায় দু’মাস ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, কাঁচাবাজার, মুরগিসহ মসল্লা পর্যন্ত কিনে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাজী সেলিম। ফলে এলাকাবাসি তাকেই মেয়র পদে নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছে।
ডিসিসির দক্ষিনের মনোনয়ন লড়াইয়ে হাজি সেলিম না সাঈদ খোকন এগিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
২০০২ সালের ১০জুন অনুষ্ঠিত অবিভক্ত ডিসিসির সর্বশেষ নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধীদল এবং বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে প্রার্থী দেয়নি। প্রধান বিরোধীদল মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট ফাঁকা মাঠ পায়নি। চারদলীয় জোটে সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হেদায়েতুল ইসলাম। তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন।
আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনেও ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন মেয়র পদে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। এছাড়া মাহামুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী থাকবে। মাহামুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার হওয়ার আগে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ডিসিসি উত্তরের মেয়র পদে প্রার্থী হবেন।
এর আগে ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে উত্তর থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং দক্ষিণ থেকে সাঈদ খোকন, হাজী সেলিম এবং জাসদের শিরীন আখতার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।