• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

জনগন মানছে না তারপরও খালেদা জিয়া খেলছে হরতাল অবরোধের ভোতা অস্ত্র-


প্রকাশিত: ৫:৫৭ পিএম, ১৫ মার্চ ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫৯ বার

khaleda-hasina-cartoonএস রহমান.ঢাকা: জনগন মানছে না তারপরও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে দিয়ে যাচ্ছে।অবরোধ-হরতাল এখন অনেকটাই অকার্যকর।বিষয়টি নিয়ে দলে নানা অসন্তোষ থাকলেও নেত্রীর কারণে কেউ কোন বাক্য উচ্চারন করতে সাহস পাচ্ছেন না।যদিও জোটের অনেক নেতা বিষয়টি নিয়ে নাখোশ।তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন, জোটের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই খালেদা জিয়া একাই কর্মসূচি ঘোষনা দিচ্ছেন।

বিএনপিসহ জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পারছেন যে টানা দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে চলে আসা এ কর্মসূচি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। এর প্রতি মানুষেরও কোনো আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় আবারও ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ২০-দলীয় জোট।

আজ রোববার  থেকে আগামী বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ হরতাল চলবে।  গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা জোটের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে গুম-খুন-অপহরণ, নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নেওয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে ‘গ্রেপ্তার’-এর প্রতিবাদে এই হরতাল দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলছে। কিন্তু ইতিমধ্যে এই কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে যান চলাচল এখন প্রায় স্বাভাবিক। ফিরে এসেছে চিরাচরিত যানজটও।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তাঁদের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিকে অকার্যকর বলতে চান না। তবে কেউ কেউ পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করছেন যে এ ধরনের কর্মসূচি গুরুত্ব হারিয়েছে। উপরন্তু নাশকতা ও পেট্রলবোমা হামলার কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া যে সংকট সমাধানে এখনও আগ্রহী সেটাও দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সরকারকেও বার্তা দিয়েছেন। এই জন্য সংকট নিরসনের কথাও বলেছেন। কি হলে সংকট নিরসন হবে সেটাও বলেছেন। তা করে আবার শর্তও দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, শর্ত দিয়ে কোন সংলাপ হবে না। বেগম খালেদা জিয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে না আসলে আলোচনা সম্ভব নয়। বন্ধ করলেই কেবল আলোচনা সম্ভব। সরকারকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা যাবে না। বিএনপিকে পেট্রোল বোমার রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে। কোনো রাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। বরং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরাও তাই করবো। তবে জ্বালাও পোড়াও ও মানুষ হত্যা বন্ধ করলে আর শান্তির পরিবেশ আসলে পরে আলোচনা হলেও হতে পারে। সূত্র জানায়, বিদেশিদের তারা বলবে, আমরাতো বসতে চাই তারা সহিংসতা বন্ধ করছে না।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগ কর্মসূচির কথা ভেবে রেখেছিলেন নীতিনির্ধারকেরা। কিন্তু অবরোধ-হরতালের মধ্যেও রাজধানীর জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক দেখে নেতারা এখন আর অসহযোগের কর্মসূচি দিতে সাহস পাচ্ছেন না।

দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, এ দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনে হরতাল-অবরোধ ও অসহযোগকে সবচেয়ে কঠোর কর্মসূচি মনে করা হয়। এর মধ্যে বিএনপি জোট টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। এত লম্বা সময় কর্মসূচি চালানোর নজির এ দেশে নেই। তাই এ পর্যায়ে হয়তো কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। তবে ঢাকার বাইরে হরতাল-অবরোধের প্রভাব রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপির নেতাদের দাবি, সরকার র্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে গুম-খুনসহ দমন-পীড়ন চালিয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা অসম্ভব করে তুলেছে। কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতারা নিজ ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিও দুই মাসের বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ।

এমন পরিস্থিতিতে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির বাইরে আর কোনো বিকল্প দেখছেন না জোটের নীতিনির্ধারকেরা। পিছু হটার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার লক্ষ্যে দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান  বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, যতক্ষণ না আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তা ঠিক আছে। এর পাশাপাশি বড় ধরনের সমাবেশ করা গেলেই বরং আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে ত্বরান্বিত করা যাবে।

জোটের শরিক ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। এখন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে কি, হচ্ছে না এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া আছে। এটি অন্ধের হাতি দেখার মতো।
যদিও বিএনপির প্রতি দলটির দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ ছিল, আন্দোলন কর্মসূচিতে যেন ছাড় দেওয়া হয়। সংলাপের ইঙ্গিত পেলে কর্মসূচিতে ছাড় দিতে দলের নীতিনির্ধারকেরা রাজি আছেন।

বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, বিএনপি আসলে শুরু থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু সরকার সেই দিকে যেতে বাধ্য করেছে। সরকার গত বছর বিএনপিকে ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে সভা করতে দিল না। ১৪৪ ধারা জারি করে সেটা বন্ধ করে দিল। এরপর ৩ জানুয়ারি ম্যাডাম অফিসে আসার পর তাকে অবরুদ্ধ করে দিল। পুলিশ, ময়লার গাড়ি, বালুর ট্রাকসহ আরো বিভিন্নভাবে তাকে অবরুদ্ধ করে রেখে তার গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। তিনি ৫ জানুয়ারির ঢাকার সমাবেশ করতে পারলেন না। তাকে বাইরে বের হতেও দিলেন না। সব ধরনের সভা সমাবেশও নিষিদ্ধ করলো। নেতাদের গ্রেফতার করা হলো। যখন পর পর এই সব ঘটনা ঘটছিল তখন তার সামনে আর কোন উপায় ছিল না। ৫ জানুয়ারি ম্যাডাম বলে দিলেন লাগাতার কর্মসূচি হিসাবে অবরোধ চলবে। সেই থেকেই চলছে। এরপরতো লাগাতার অবরোধ চলার পাশাপাশি সপ্তাহে পাঁচদিন হরতাল চলছে। তিনি বলেন, এই ধরনের পরিকল্পনা বিএনপির ছিল না। কিন্তু সরকার সেই দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এই কারণে এখনও হরতাল চলছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ১৬ জন বিদেশি কূটনীতিক সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ‘সেতুবন্ধে’ যে উদ্যোগ নেন, খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁদেরই একটি বার্তা ছিল চলমান কর্মসূচি কাটছাঁটের।

যাতে সরকার তা আস্থায় নেয় এবং কূটনীতিকদের দূতিয়ালিতে সুবিধা হয়। এর বিনিময়ে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী কী চায় এবং ছাড় দিলে কীভাবে, কতটুকু দেবে, তারও একটি লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয় কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের চাহিদা অনুযায়ী, বিএনপির পক্ষ থেকে একটি লিখিত প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। যদিও তা এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে কূটনীতিকদের জন্য তৈরি করা প্রস্তাবের অনেকগুলো বিষয় প্রকাশ করেছেন। খালেদা জিয়ার ভাষায়, ‘বিরাজমান সমস্যার সমাধানে’ প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তি, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, পুলিশি ও যৌথ বাহিনীর ‘হয়রানি’ বন্ধ করতে হবে।

এরপর সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে। সবশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কূটনীতিকেরা সক্রিয় হলে বা তাঁদের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখলে চলতি সপ্তাহের হরতাল কর্মসূচি কাটছাঁট করা হতে পারে।