জঙ্গিবাদের ইন্ধনে সরকার বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র
প্রিয়া রহমান : কাদের ইন্ধনে বারছে জঙ্গিরা? কে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে এবং কারা দেশবিরোধী চক্রান্ত করছে বাংলাদেশে। তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। ইতিমধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন রাজনীতিকরা। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করতে চলছে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র।
দেশের বিশিষ্ঠজনরা বলছেন, উন্নয়ন ব্যাহত করা, বিদেশী বিনিয়োগ বাঁধাগ্রস্ত করারও ষড়যন্ত্র চলছে। আর এটা বাড়বে। যদি এখনই দুই দল জঙ্গিবাদ নির্মূলের ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করেন। একে অপরের উপর দোষারোপের বেড়াজাল থেকেও বের হতে হবে।
জানা গেছে, জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হওয়ার পর জেএমবিরা ওই সময়ে সংগঠিত হওয়ার নতুন করে পরিকল্পনা করে। তবে ওই সময়ে তারা সাময়িক সময়ের জন্য বিরতি দেয় ও গোপনে পরিকল্পনা করতে থাকে। এরপর তারা বেশ কয়েকবছর বিরতি দিয়ে আবারও কর্মকান্ড শুরু করেছে।
জঙ্গিরা নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম সহ বিভিন্ন নাম নিয়ে কাজ করছে তাদের সকলের লক্ষ্য একটাই তাগুতি আইন বাতিল করা। কোরআনের বিধানমতে চলা। এই জন্য তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে। তারা খেলাফত ঘোষণা করার পরিকল্পনাও করেছে। পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য বিভিন্ন সময় নাশকতার ঘটনা ঘটাচেছ। আস্তে আস্তে তাদের কর্মকান্ডের প্রসার বাড়াচ্ছে।
সরকারের ও আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপি জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধাচারণ করে উগ্রবাদীদের পক্ষ নিয়েছে। বিএনপি একাধিকবার জঙ্গিবিরোধী অভিযানকে নাটক আখ্যা দিয়েছে। বলেছে, তরুণদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে জঙ্গি বানিয়ে খুন করছে সরকার।বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বাংলাভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনের যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দরকার ছিল সেইভাবে হয়ে উঠেনি।
এই কারণে জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থানে আস্তানা তৈরি করেছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এখনও করছে। তাদের সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু ওই সময় থেকেই যদি পুরোপুরি জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য ধারাবাহিক তৎপরতা বজায় থাকতো তাহলে আজকে যে পর্যায়ে গেছে সেটা যেত না। কিন্তু এখন যে অবস্থায় গেছে তা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি নয়, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সরকার। বিএনপি জঙ্গিবাদকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। বরং সরকারই সুষ্ঠু তদন্ত না করে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
আমরা বলেছি, জঙ্গিবাদ জাতীয় সমস্যা। এটা মোকাবেলা করতে হবে। তা করতে হলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাকও দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সে ডাকে সাড়া দেয়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে বলেছেন, এই অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। তারা জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছে। যদি তাই না হতো তাহলে তারা এতটা আস্কারা পাওয়ার কথা ছিল না। আর এখন ষড়যন্ত্র চলছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে ফেলে দেওয়া।
সেই ষড়যন্ত্র কখনো বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।গত তিনদিন ধরে সিলেটে জঙ্গিবিরোধী সেনা অভিযান চলছে। সেখানে অভিযানস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে ছয় জনের মৃত্যু হয়। আর ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়। এতে বিএনপি উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছে, সরকারকে এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতেই হবে।
সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিদেশে কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা বের করতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় আমাদের এখানেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের বের করে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত বিচার প্রয়োজন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা পূর্ণাঙ্গ নয়। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। জঙ্গিবাদ বিস্তাররোধ করার জন্য যুগোপোযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে ঘটনা ঘটার আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও ঘটনা ঘটার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। আর কেউ ঘটনা ঘটালে তাদেরকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।