• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চালের বাজার গরম কেন মাননীয় মন্ত্রী?


প্রকাশিত: ৭:৪৩ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৩ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : চালের দাম কমছে না কেন? এর উত্তর কে দেবে? মন্ত্রী বলছেন , বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল। কিন্তু সাধারন Kamrul-www.jatirkhantha.com.bdমানুষ বাজারে গিয়ে তা দেখছে না। দেশবাসী মনে করেছিল শুল্ক কমানোর পর চালের দাম কমবে কিন্তু তা হয়নি। মোটা-চিকনসহ সব ধরনের চালের দাম আরো এক ধাপ বেড়েছে। প্রতি কেজি মোটা ও চিকন চালে মানভেদে ১ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এতে সরকারের প্রতি নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে ভোক্তাদের।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতে জিটুজি পর্যায়ে চাল বা গম কেনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে যেতেন। এখন খোদ খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে টিমগুলো বিদেশে যাচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চাল বা গম কেনার নেগোসিয়েশন মিটিং-এ মন্ত্রী চাইলেও উপস্থিত থাকতে পারেন না। কারণ কোনো দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী ওই সব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না। এ অবস্থায় মন্ত্রী চাল বা গম কিনতে বিদেশ সফরে গেলেও তাদের কিছু করার থাকে না।

rrrএরই মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমার সফর করে এসেছেন। খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ সফরে এই দলে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক তোফাজ্জেল হোসেন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও মন্ত্রীর স্ত্রী।

কথা ছিল মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে। তবে লক্ষ্য অর্জন হয়নি। সেকথা মন্ত্রী নিজেই কাল রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, শুল্ক কমলে চালের দাম কমবে- ব্যবসায়ীদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে সরকার গত এক মাসের ব্যবধানে চালে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশই কমিয়ে দেয়। বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে। ২৬ শতাংশ শুল্ক কমানোয় কেজিতে চালের দাম কমে যাওয়ার কথা প্রায় ৬ টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুল্ক কমানোর ফলে চালের আমদানি বেড়েছে। কিন্তু তা মূলত আতপ ও ভারতীয় মোটা চাল। সরু ও মাঝারি চাল আমদানি হচ্ছে কম। এর সুযোগ নিচ্ছে দেশের মিল মালিকেরা। পাশাপাশি একটি আমদানিকারক চক্রের কারসাজিতে চালের বাজার দর ঊর্ধ্বমুখি রয়েছে।

জানা গেছে, ঈদের পনের দিন আগে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা চাল (ইরি/স্বর্ণা) ৩৯ টাকা হলেও বর্তমানে তা ৪১ টাকা, বি আর-আটাশ চালের কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৪৮ টাকা, মিনিকেট চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

বর্তমানে রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বি আর-আটাশ ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়, মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে, ঈদুল আজহার পর রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের মধ্যেই চাল আমদানি করতে মিয়ানমার সফরে যান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

মন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৩ লাখ টন চালের চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ লাখ ২০ হাজার টন চাল পাবো। মিয়ানমার থেকে চাল আসতে মাত্র তিন দিন সময় লাগে বলেও সংসদে জানান খাদ্যমন্ত্রী।সংসদে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে। কোনো রকম বাড়তি দাম নেই।

দেশে বছরে চালের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন। এরমধ্যে বোরো মৌসুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরোর উৎপাদন কম হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছে। চালের আমদানি বাড়াতে গত ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। কিন্তু এরপরও বাজারে তেমন প্রভাব না পড়ায় গত ১৭ আগস্ট আমদানি শুল্ক আবার কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামে চালের মজুত গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। সরকারি গুদামে বর্তমানে চাল রয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। গত বছর একই সময়ে মজুদ খাদ্য ছিল ৯ লাখ ৭ হাজার ১২ টন। অথচ ২০১১ সালের এই দিনে চালের মজুত ছিল প্রায় দশ লাখ টন। ২০১২ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩ সালে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন।

২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। এবারই প্রথম চালের মজুত নিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার বেশির ভাগই চলে এসেছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আসবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থ বছরে মোট ১৫ লাখ টন চাল আসবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

তিনটি দেশ থেকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় বলা হয়, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড প্রতিটি দেশ থেকে বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এখনো পর্যন্ত থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া থেকে এক টন চালও জিটুজিতে আমদানি হয়নি। বরং খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাল ও গম কেনা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এরই মধ্যে চাল ও গম কিনতে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করার পর ভারত থেকে কম শুল্কে চাল আমদানি হলেও পাইকারি বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে বিশ্ববাজারে চাউলের বুকিং রেটের সাথে সাথে পরিবহন ব্যয় ও কতিপয় ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির কারণে প্রতি কেজি চালের ওপর পরিবহন ব্যয় দুই থেকে আড়াই টাকা পড়ছে। ঈদের পর থেকে ভারতের অংশে ৬/৭ দিন এবং বাংলাদেশে দৌলতিয়া ঘাট এলাকায় আরো ৫/৬ দিন ধরে যানজটের কারণে প্রতিটন চাউলের ভাড়া ১২শ’ থেকে ২২শ’ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার কয়েকশ’ চাউল আমদানিকারকের মতে মূল্যের সাথে সাথে পরিবহন ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের জন্য অনেকটা দায়ী। অন্যদিকে আমদানিকারকরা জানান, সরকার মূলত অনেক বেশি দামে চাল ক্রয় করার কারণে বেসরকারি পর্যায়ের আমদানিকারকদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। তাদেরকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

তাছাড়া সরকার চাউলের ওপর শুল্ক কমানোর সংবাদে সাপ্লাইয়ারগণ বুকিং রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে আমদানিকারকগণ শুল্ক কমানোর সুবিধা পাচ্ছে না। বেসরকারি পর্যায়ে বড় বড় আমদানিকারকদের নিকট অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট আমদানিকারকগণ অসহায়। চট্টগ্রামের আমদানিকারকগণ মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করে থাকে। মিয়ানমার থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আতপ চাল আমদানি হয়ে থাকে। এ চাল অপেক্ষাকৃত দামে কম।

এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে মিয়ানমার থেকে কিছুদিন চাল আমদানি এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে চাল সংকটের পর শুধু মিয়ানমার থেকে প্রায় ১ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে আসা আতপ চাল চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকজন খেয়ে থাকেন। দেশের সাধারণ মানুষ এসব চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত নয়।

চাল আমদানিকারক আজমীর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ১ টাকা বাড়লে খুচরা গ্রাম পর্যায়ে তা ৩/৪ টাকা বেড়ে যায়। আবার পাইকারি পর্যায়ে কমলে খুচরা পর্যায়ে কমতে সময় নেয়। এরই মধ্যে দেখা যায়, পাইকারিতে আবার বেড়ে যায়। ফলে খুচরা পর্যায়ে ভোক্তারা সুবিধা পায় না।