• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চাকরীর মূলা ঝুলিয়ে জুয়ার ফাঁদে..


প্রকাশিত: ৯:৪৯ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ১৭ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭০ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :   চাকরীর মূলা ঝুলিয়ে জুয়ার ফাঁদে ফেলে টাকাকড়ি হাতিয়ে নিয়েছে পাঁচ ক্রিমিনাল। এদের ফাঁদে pbi-5-www.jatirkhantha.com.bdপড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অবসারপ্রাপ্ত সচিব, যুগ্নসচিব, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। রাজধানীতে এমন একটি প্রতারক চক্রের হিন্দিভাষী প্রধানসহ পাঁচজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে অভিনব প্রতারণার কাহিনী।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শুক্রবার রাজধানীর পল্লবী থেকে এদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারা হচ্ছেন- হারুণ-অর রশিদ (ছদ্মনাম রামনাথ ঠাকুর), সনজ সাহা ওরফে উজ্জল চৌধুরী (ছদ্মনাম জি মোস্তফা কামাল), শামসুল আলম মজুমদার ওরফে কোপা শামছু (ছদ্মনাম মিজানুর রহমান), আমিনুল ইসলাম আমিন এবং মোকসেদুর রহমান আকন (ছদ্মনাম আল আমিন)।

শনিবার পিবিআইর ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি মাইনুল আহসান বলেন, চক্রটি রাজধানীতে প্রায় আট বছর ধরে তাদের তৎপরতা চালালেও কখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
প্রয়োজনমতো প্রকৃত নাম আড়াল করে ছদ্মনাম ব্যবহার করে তারা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে তাদের কাছ থেকে কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত।

চক্রটির প্রতারণার খবর অনেক আগে থেকেই পাচ্ছিলেন জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা মাইনুল জানান, নতুন ধরনের প্রতারণার খবর পেয়ে তারা মাঠে নেমে পাঁচজনক গ্রেপ্তার করেন। প্রতারণার শিকার প্রত্যেকেই গ্রেপ্তারদের শনাক্ত করেছেন বলে জানান তিনি।সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদ, সালাউদ্দিন আহমেদ এবং বশির আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

জানুয়ারি মাসে প্রথম আলো পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ইফতেখার হোসাইন ভূঁইয়া নামে হাবিব ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তা ফোনে যোগাযোগ করেন। তাকে ফোনের অপর প্রাপ্ত থেকে জীবনবৃত্তান্ত ইমেইলে পাঠাতে বলা হয়। জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর দুইদিন পর একজন তার সাথে যোগাযোগ করে গ্রিন রোডে কথিত এমডির ছিমছাম একটি বাসায় নিয়ে যায়।

সেখানে তাকে বোঝানো হয় তাদের গার্মেন্টসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে তার চাকরি হবে এবং বেতন বেশ ভাল। গাজীপুরে তাদের কারখানাও দেখানোর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ইফতেখার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওই বাসায় যাওয়ার পর একজন এমডি এবং একটি ভারতীয় কোম্পানির কান্ট্রি ম্যানেজার হিসাবে একজনের সাথে পরিচিত হন। তাকে চা-বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়।

চাকরির কথা বলে তাকে ডেকে নেওয়া হলেও সেই বাসায় ওষুধের কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবসার কথা তারা নিজেরা বলাবলি করে এবং এর সঙ্গে আমাকে জড়িত হওয়ার লোভ দেখানো হয়। সেক্ষেত্রে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ কোটি টাকা হবে বলে জানায়।সে হিসাবে প্রতারক চক্র নিজেদের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য টাকা ভাগাভাগি করে এবং আমাকেও জড়িত হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। সে হিসাবে আমার ভাগে পড়ে ৪০ লাখ টাকা।

ইফতেখার বলেন, আমার সামনে তারা নিজেদের মধ্যে এমনভাবে লেনদেন করে যে, সেখানে আমার একটা কিছু করা দরকার, এমনটি ভেবেই ২১ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের তিন দফায় ৩৫ লাখ টাকা দেই।
তিনি জানান, চক্রটি পরপর দুইদিন তার সামনে জুয়া খেলে। সেখানে রামনাথ ঠাকুর পরিচয়ধারী একজন হিন্দি ভাষী লোকও ছিল। বড় ব্যবসায়ী পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তি প্রথমদিন জুয়া খেলায় ২৫ লাখ টাকা জিতে চলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তারা-

এটা তাদের অন্যতম কৌশল জানিয়ে ইফতেখার জানান, আসলে এটাও তাদের লোক। ওই হিন্দিভাষী ব্যক্তি চলে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আবার জুয়ার আসর বসিয়ে তাকে (হিন্দি ভাষীকে) হারাতে হবে বলে পরিকল্পনা করে।সে অনুযায়ি পরদিন ওই বাসায় আবার জুয়ার আসর বসে এবং দুই কোটি টাকার এই জুয়ায় হিন্দিভাষী ব্যক্তি হেরে যায়। হিন্দিভাষী ব্যক্তি টাকা দেওয়ার শর্ত হিসাবে যারা জিতেছেন তাদের কাছে সমপরিমাণ টাকা দেখতে চায়। এ জন্য দু্ইদিন সময় বেধেঁ দিয়ে সেদিনের মতো চলে যায়।

এই দুই কোটি টাকার মধ্যে কে কত দেবে সে নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় এবং তার ভাগেও কিছু পড়ে উল্লেখ করে ইফতেখার বলেন, “কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে তখন বুঝিনি। অল্প সময়ে লাভ হওয়ার লোভে অজান্তেই জড়িয়ে পড়ি। পরে যখন বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি তখন তাদের আর সেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং ফোন নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়। তখনই বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

একই চক্রের হাতে সাড়ে সাত লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন ফিরোজ খান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গুলশান লেকে প্রাতভ্রণের সময় গত মে মাসের শেষের দিকে তার সাথে একজনের পরিচয় হয়। সে নিজেকে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যানের পিএ পরিচয় দেয়।

সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হলে অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা রাজি হয়ে যান এবং বেতন ষাট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একদিন অফিসে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে টাকা পাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন এবং লাখ লাখ টাকা লেনদেন দেখান। এর মধ্যে একজন হিন্দিভাষী ব্যক্তির সাথে তারা জুয়ার আসর বসালে প্রথম দিন হিন্দিভাষী ব্যক্তি জিতে যায়। পরে তারা হিন্দিভাষী ব্যক্তিকে হারানোর কৌশল নেয়। পরদিন হিন্দী ভাষী ব্যক্তি হেরে যান।

তখন তার ভাগে সাড়ে সাত লাখ টাকা পড়ে যেটা তাকে দিতে হয়েছিল। সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রতারকরা সব ক্ষেত্রে একই কৌশল অবলম্বন করে। পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুল আহসান জানান, তাদের কাছে যে ১২ জন অভিযোগ করেছেন তার মধ্যে একজন যুগ্ন সচিব, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন, যিনি এভাবে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন।প্রতারক চক্রটি সম্পর্কে আরো খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।