• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেম খুনের নেপথ্যে


প্রকাশিত: ১১:৪৭ পিএম, ২০ এপ্রিল ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০১ বার

প্রত্যক্ষ খুনীরা-বিদিরপুরের টুটুল, লইলাপাড়ার রানা, রেলবাগানের শামিম, ও মসজিদপাড়ার ইব্রাহিমসহ-
এমপি বলেন-ডিআইজি নূরুল ইসলামের নির্দেশে চাঁপাই পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান
যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা সামিউল হক লিটনের গুন্ডা বাহিনী এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ :  চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন সাবেক পৌর কাউন্সিলরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও জখম করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। বুধবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নবাবগঞ্জ পৌর এলাকার জনবহুল উদয়ন মোড়ে এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
দূর্বৃত্তরা পেছন থেকে এসে প্রথমে জেমের পায়ে হাম্বল (শাবল) দিয়ে আঘাত করলে সে চিৎকার করে ওঠে। জেম বলেন, ‘আমি রোজা আছি, মারিস না।’ এর পরই সামনে থেকে আরও তিন-চারজন দেশীয় অস্ত্র ও হাম্বল দিয়ে তাঁকে কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে জেম নিস্তেজ হয়ে পড়লে দ্রুত পালিয়ে যান হামলাকারীরা।
নিহত কাউন্সিলর জেলা যুবলীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দানা গ্রামের মাইনুল আহসান এডু মাষ্টারের ছেলে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. খাইরুল আলম জেম (৫০)। তবে শিবগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি হলেও তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াগোলায় বসবাস করতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রমজান মাস উপলক্ষে প্রতিদিনের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার উদয়ন মোড়ে ইফতার কিনতে আসেন খাইরুল আলম জেম। এ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে ইব্রাহিমের মটরসাইকেল গ্যারেজের সামনে পৌঁছলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথ অবরোধ করে প্রথমে মারধর শুরু করে। এ অবস্থায় তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা হাতে থাকা রড দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে দ্রুত ওই স্থান থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শহর যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মামুন আলী বলেন, জেম ভাইসহ আমরা কয়েকজন ইফতার কিনে উসকাঠিপাড়া মসজিদের সামনে দিয়ে যাবার সময় গ্যারেজ থেকে মটরসাইকেল নিতে গেলে বিদিরপুরের টুটুল, লইলাপাড়ার রানা, রেলবাগানের শামিম ও মসজিদপাড়ার ইব্রাহিমসহ আরো কয়েকজন তাকে রাস্তায় ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কোপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পথচারী ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক মনিরা সুলতানা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় জেম নামে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা চলাকালে রাত ৭টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত ব্যক্তির মাথায় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকায় রক্তশূন্য হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শহরের উদয়ন মোড়ে একটি সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। তবে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযান অব্যহত রয়েছে পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।

এদিকে ঘটনার পরপরই নিহত খায়রুল আলম জেমের মরদেহ দেখতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস। এ সময় তিনি এমন নিকৃষ্ট হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করে বলেন, নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন কৃতি সন্তান ডিআইজি নূরুল ইসলাম যিনি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নিয়ে ঢাকায় কর্মরত আছেন তার নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান ও যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা সামিউল হক লিটনের গুন্ডা বাহিনী এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

 তারা জেলার ১০ জন ব্যক্তির নামের একটি তালিকা করেছে যাতে প্রথমেই জেমের নাম ছিলো। এছাড়া কয়েকদিন থেকে খায়রুল আলম জেমকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এই চক্রটি। তবে ইতিমধ্যে জেমের হত্যাকান্ডের বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে ও বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হবে। আর ভূয়া সনদে চাকরির বিষয়ে তদন্তের জন্যও অনুরোধ করা হবে।

এ সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি একেবারে বাজে অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের নিস্কৃয়তায় সন্ত্রাসীরা একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এটা পুলিশের ব্যর্থতা। তারা দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব পুলিশ সুপারকে বহন করতে হবে বলেও দাবী করেন তিনি।এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ও থানায় ভিড় করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আর রাতেই জেলা শহরে যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম জেমকে হত্যার প্রতিবাদে ও দূর্বৃত্তদের বিচারের দাবিতে মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।