চলচ্চিত্র অনুদানে দুর্নীতি- ফাইল প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে
খন্দকার আসমা আক্তার : পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। অভিযোগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র দুর্নীতির ভূত তাড়ানোর দাবি তুলে তদন্ত ও প্রতিকার চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও আমি অনুদান পাইনি এ ঘটনা প্রমাণ করে এখানে দুর্নীতির বাসা বেঁধেছে।
জানা গেছে, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটিতে আগে দেশের র্কীতিমান যোগ্য মেধাবীরা থাকত। তাঁরা চলচ্চিত্রশিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করত। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রধানের ব্যবস্থা করত এই কমিটি। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে এই কমিটির বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। চিঠিতে তিনি জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন আটজন পরিচালক। তবে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান পায়নি ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটি।অভিযোগে বলা হয়, এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও অনুদানের প্রতিযোগিতায় শীর্ষে অবস্থান করলে, সে বছরও তাঁকে অনুদান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান না পাওয়ার এ ঘটনায় তিনি দারুণ মর্মাহত। এজন্য তিনি তদন্ত দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জানা গেছে, গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হকের নেতৃত্বে ২২টি চলচ্চিত্রকে নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দেখা গেছে, শিশুতোষ শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর ৬৬ দশমিক ২৯ নম্বর পাওয়া নূরে আলমের ‘কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ’ ছবিটিকে অনুদান না দিয়ে ৬২ দশমিক ২৯ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আবু রায়হান মো. জুয়েলের ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’ ছবিটিকে অনুদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
একইভাবে প্রামাণ্যচিত্র শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর (৭৫ দশমিক ৪৩) পাওয়া মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটিকে অনুদান দেওয়া হয়নি। এই শাখায় অনুদান পেয়েছে হুমায়রা বিলকিসের ‘বিলকিস বিলকিস’ ও পূরবী মতিনের ‘মেলাঘর’ ছবি দুটি। বাছাই কমিটি এ ছবি দুটিকে দিয়েছেন যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৭১ এবং ৪৭ দশমিক ৮৬ নম্বর।
এদিকে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির একজন সদস্য জাতিরকন্ঠ কে জানিয়েছেন, কোনো নম্বরযুক্ত তালিকার ভিত্তিতে অনুদানের সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা। শুরুতে নম্বরযুক্ত তালিকা দেওয়া হলেও সেটার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁর মতে, নম্বর যুক্ত হলে তাঁদের তেমন কিছুই করার থাকে না। নম্বরের বদলে বরং ছবিটি কেন অনুদান পাওয়ার যোগ্য, সেই মন্তব্যসহ বিবেচনার জন্য চূড়ান্ত কমিটিকে দেওয়া যেতে পারে। এ বছর সেভাবেই তাঁদের সামনে দেওয়া হয়েছে।তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো চলচ্চিত্র এ বছর অনুদান পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, নিশ্চয়ই পেয়েছে-খোঁজ নিয়ে দেখেন।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রে অনুদান দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বাছাই কমিটির নম্বরের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় চূড়ান্ত কমিটি। তবে এবারই প্রথম নম্বরবিহীন তালিকা চেয়েছিল চূড়ান্ত কমিটি। ফলে তালিকার নিচের দিকে থাকা ছবিও মনোনয়ন পেয়ে গেছে।অনুদানের সাধারণ শাখায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল তৌকীর আহমেদের ‘অদ্ভুত আঁধারে’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ছবি ‘মেকআপ বক্স’। কিন্তু এ ছবি দুটির বদলে অনুদানের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে অষ্টম অবস্থানে থাকা আকরাম খানের ‘বিধবাদের কথা’ ও একাদশ অবস্থানে থাকা হোসনে মোবারক রুমির ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ ছবি দুটি।
এ সম্পর্কে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, অনুদানের সিদ্ধান্ত অনেকটা ব্যক্তিনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে অনুদান চালু করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুদানের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। অনুদান দেওয়া উচিত চিত্রনাট্যের মান মেধা এবং ছবি তৈরীতে মুন্সিয়ানার ক্ষেত্রে। যা বর্তমানে অবহেলিত হচ্ছে।