চট্টগ্রামে ৭ স্বতন্ত্র’র কপাল খুলছে
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার চট্টগ্রামে ৭ স্বতন্ত্র’র কপাল খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, মনোনয়নে জালিয়াতির কারণে এই স্বতন্ত্ররা জিতে আসতে পারেন। অনেকে স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যে নেমে পড়েছেন ময়দানে। ওদিকে মার্কার প্রার্থীরা পড়েছেন বেকায়দায়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়ি, মিরসরাই, বন্দর-পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, বোয়ালখালী সাতকানিয়া, পটিয়া- এই সাতটি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পাল্লা ভারী।
ফটিকছড়ি আসনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকার টিকেট পেলেও আসনটি এখনও ঝুলছে। এবার তরিকত ফেডারেশন শনিবার পর্যন্ত সংকেত পায়নি এ আসনে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়ব। তৃণমূলে শক্ত অবস্থানের কারণে কপাল খুলতে পারে তৈয়বের।
মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের কারণে স্বস্তিতে নেই ইন্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন ফেরত পাবার কারণে সমীকরণ জটিল হতে শুরু করেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে গিয়াস উদ্দিনের সুসম্পর্কের কারণে নির্বাচনী বিতরনী পার করা কঠিন হতে পারে নৌকার প্রার্থী রুহেলের৷ এই আসনের দুই শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট ও ব্রিগেডিয়ার ( অব) শামস অবস্থান নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে। ফলে ভোটের বাজারে গিয়াস উদ্দিন সম্ভাবনা বেড়েছে।
২০০৮ সালে ব্যবসায়ী কোটায় বন্দর পতেঙ্গা (চট্টগ্রাম -১১) আসনে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামাত ঘরনার ব্যবসায়ী এম এ লতিফ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার দলের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ তার বিরুদ্ধে। কাউন্সিলর জিয়াউর হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তার বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমীকরণ এই আসনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চান্দগাঁও বোয়ালখালী ( চট্টগ্রাম -৮) আসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তার মনোনয়ন বাতিলের খবরে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নোমান আল মাহমুদ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করলেও, মনোনয়ন ফেরত পেয়েছেন আবদুচ ছালাম। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠকে এই আসনটি ছেড়ে দেবার সমীকরণও যুক্ত হয়েছে নির্বাচনী ঝড়ে। তবে, ভোটের মাঠে নানা কারণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালামের পাল্লাভারী।
চট্টগ্রাম শহরের হালিশহর -ডবলমুরিং এলাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু’র বিজয়ের সম্ভাবনা কমেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মন্জুরুল আলমের কারণে। সাবেক মন্ত্রী ডাঃ আফসারুল আলমের মৃত্যুর পর এই আসনে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে সেই উপ নির্বাচনের হিসাব নিকাশ আর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সমীকরণ ভিন্ন- এমন বিশ্লেষণ বিশ্লেষকদের।
সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের বর্তমান সাংসদ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. আবু রেজা নদবীর ভাগ্যও ঝুলে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের কারণে। মনোনয়ন ফিরে পেয়ে জোরেশোরে ভোটের মাঠে আছেন তিনি৷ সাতকানিয়া লোহাগাড়ার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাই এমএ মোতালেবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে সমীকরণ পাল্টে গেছে এই আসনেও।
পটিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামসুল আলম পটিয়া থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি ভোটের মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এবার পটিয়া থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়বেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম। বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামসুল আলমের অনড় অবস্থান বেকায়দায় ফেলতে পারে তাকেও।