ঘুমের মধ্যে ওম পুরী নেই- মৃত্যু ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেল
বিনোদন রিপোর্টার : মুম্বাইয়ের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা ওম পুরী। গত বছর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে নিজের মৃত্যু নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি। তার সেই কথা অনেকটাই মিলে গেছে।
নিজের মৃত্যু সম্পর্কে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে অনেকটা হাসতে হাসতে ওম পুরী বলেছিলেন, “মৃত্যুটা তো বুঝতেই পারে না কেউ। ঘুমের মধ্যেই হয়তো চলে যাব। আপনারা হয়তো জানতে পারবেন সকাল সাতটা বাইশ মিনিটে ওম পুরী মারা গেছেন ।ঘটনাচক্রে তার মৃত্যু অনেকটা সেভাবেই হয়েছে।
তার কথায়, মৃত্যুর ভয় নেই। অসুস্থ হয়ে পড়াটা আরও ভয়ের। যখন দেখি মানুষ অসুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারে না, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে – আমার সেটাতেই বড় ভয়। শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওম পুরী। তার গাড়িচালক দরজায় কড়া নেড়ে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। এরপরই ওম পুরীর মৃত্যুর বিষয়টা জানা যায়।
বিভিন্ন রকম চরিত্রে সচ্ছন্দ্য অভিনয় দক্ষতা আর গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর – এই দুটোই ছিল ওম পুরীর মূল সম্পদ। সেজন্যই গোটা মুখে বসন্তের দাগ থাকা স্বত্ত্বেও তাকে সত্যজিৎ রায়, গোবিন্দ নিহালনী, শ্যাম বেনেগাল, মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষরা যেমন নিজের ছবির জন্য ডেকেছেন, তেমনই ডেকে নিয়েছেন ‘গান্ধী’ ছবির জন্য রিচার্ড অ্যাটেনবরো বা ‘সিটি অফ জয়ে’র পরিচালক রোল্যান্ড জফ।
রাজকুমার সন্তোষী, কমল হাসান, সুভাষ ঘাই বা প্রিয়দর্শনের মতো জনপ্রিয় হিন্দি ছবির পরিচালকরাও তাকে রেখেছেন নিজেদের হিট ছবিগুলোতে। আবার ‘ওয়েস্ট ইজ ওয়েস্ট’ বা ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’-এর মতো আন্তর্জাতিক ছবিতেও কাজ করেছেন ওম পুরী। বিবিসি-র টেলিভিশন নাটক ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’এ-ও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৫০ সালে হরিয়ানার আম্বালায় এক হিন্দু-পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম হয় ওম পুরীর। বাবা ভারতীয় রেল আর তার আগে সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। হিন্দি ছাড়াও অনেক ভারতীয় ভাষা এবং ব্রিটিশ ও হলিউডি ছবির সঙ্গে পাকিস্তানের ছবিতেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চার দশক ধরে অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা আর তার পরে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করেন ওম পুরী।
দিল্লির এনএসডি-তে আরেক বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ ছিলেন ওম পুরীর সহপাঠী। সেই সময়ে খুব কম অভিনেতারই নাট্য-অভিনয়ের প্রথাগত শিক্ষা বা ডিগ্রি ছিল। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ওম পুরী। ‘ঘাঁসিরাম কোতোয়াল’ নামের মারাঠি ভাষায় তৈরি ছবিটি-ই তার অভিনয় করা প্রথম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র জগতে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ওম পুরী।