গুমের অনুসন্ধানে কমিটি
ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করবে সরকার-
বিশেষ প্রতিনিধি : গুমের ঘটনাগুলো তদন্তে একটি কমিশন গঠন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার হয়েছেন, সেসব গুমের কারণ কী, কারা দায়ী তা তদন্ত করে দেখবে এই কমিশন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এ সভা হয়। পরে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা পরিষদের আজকের সভায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত এই ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন আহত-নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখার কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে একটি নীতিমালা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যখন জনগণের টাকা ব্যয় করে কোনো প্রকল্প হয় বা স্থাপনা হয় সেটির নাম কি নীতি অনুসরণ করে হবে, সে বিষয়ে বলা থাকবে এই নীতিমালায়। যাতে এমন নাম হয়, যেটি কোনোভাবেই ‘ফ্যাসিবাদ’কে উসকে দেবে না এবং তাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। একপর্যায়ে এটিকে আইনি কাঠামোয় আনতে হবে বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাম নিয়ে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে যায়, এটি যাতে না হয়, সে জন্য এই নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
আইনি প্রক্রিয়াগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কয়েকজন উপদেষ্টা এবং দেশের আইনবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবেন। কোথায় কোথায় কী নির্দেশনা যাওয়া দরকার, সেটি তাঁরা ঠিক করে জানিয়ে দেবেন।
দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রতিবাদ করতেই পারে। অনেক বছর অনেক কিছু বলতে পারেনি; কিন্তু এই প্রতিবাদের কারণে জনজীবনে যাতে বাড়তি অসুবিধার সৃষ্টি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ও সরকারের মুখপাত্র কীভাবে আলোচনায় বসতে পারে সেটিরও একটি উপায় বের করা হবে।
উপকূলীয় মৎস্য আহরণে বিদেশি ট্রলার যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য কোস্টগার্ডকে (উপকূল রক্ষা বাহিনী) নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৩৪ ক ধারা বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাসসম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে। নির্বাহী আদেশে তা করা যাবে না।
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শেখ হাসিনার নাম বাদ দিয়ে ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ করার জন্য অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর সরকারি অর্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের ক্ষেত্রে আইনি কাঠামো প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।