• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমার জয়তু-নেত্রী অং সান সু


প্রকাশিত: ৪:৩৮ এএম, ১০ নভেম্বর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭০ বার

172703-------------------লাবণ্য চৌধুরী:    মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পথে রয়েছে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। গতকাল সোমবার অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ শুরু করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে প্রকাশিত ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৪টিই পেয়েছে এনএলডি। দলটির দাবি, মোট আসনের ৭০ শতাংশের বেশি পাবে তারা। গতকাল ইয়াঙ্গুনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমর্থকদের উদ্দেশে সু চি বলেন, গণতন্ত্রের জাগরণ ঘটেছে। এখনও নির্বাচনের সরকারি ফল ঘোষণা হয়নি। তার পরও কী ঘটতে যাচ্ছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

এরই মধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে সেনাসমর্থিত ক্ষমতাসীন দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে তার আগেই গতকাল ‘সু চির দলের জয়লাভে’ এক বিবৃতিতে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন। খবর এএফপি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান ও বিবিসি অনলাইনের।

নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হলে এনএলডি যে বিপুল বিজয় পাবে, তা আগে থেকেই অনুমিত ছিল। ফল প্রকাশ শুরু হতেই এনএলডির কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙা উল্লাস দেখা যায় বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা নাচে-গানে মেতে ওঠেন। সকালে ইয়াঙ্গুনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বারান্দায় হাজির হন নির্ভার হাস্যোজ্জ্বল সু চি। নিচে সমবেত উল্লসিত সমর্থকদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এতে জনগণ যেভাবে জেগে উঠেছে, তাতে গণতন্ত্রের জাগরণ ঘটেছে। এনএলডি মিয়ানমারবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।’ নিজের আসনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ৭০ বছর বয়সী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এই আইকন। সু চি বলেন, ‘এখনও নির্বাচনের সরকারি ফল ঘোষণা হয়নি। তার পরও কী ঘটতে যাচ্ছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ দীর্ঘ তিন যুগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনেক তিক্ত ও নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার শিকার সু চি চূড়ান্ত ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করারই পরামর্শ দেন সমর্থকদের। একই সঙ্গে শান্ত থাকারও আহ্বান জানান তিনি। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে পরবর্তী ২২ বছরের বেশির ভাগ সময়ই গৃহবন্দি হিসেবে কেটেছে তার। ২০১০ সালে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০১২ সালে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই নেত্রীর বাবা জেনারেল অং সান ছিলেন দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার কয়েক মাসের মাথায় গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি।

এনএলডির উত্থানের এই দিনে বড় রকম বিপর্যয় দেখেছে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ সেনাসমর্থিত ক্ষমতাসীন দল ইউএসডিপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তায় উ পর্যন্ত ধরাশায়ী হয়েছেন এনএলডির প্রার্থীর কাছে। পরে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা হেরে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘ফল যা-ই হোক, কোনোরকম ইতস্তত না করেই আমরা তা মেনে নেব।’ কী কারণে এমন বিপর্যয় হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। দলটির অনেক শীর্ষ নেতাও ধরাশায়ী হয়েছেন। সাবেক জান্তা সরকারই দলটি গঠন করেছিল। এর বেশির ভাগ নেতাই অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, নির্বাচন খুবই ত্রুটিহীন হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে বার্মার (মিয়ানমারের আগের নাম) জনগণ যে ত্যাগ ও সাহস দেখিয়েছে, এ নির্বাচন তারই দলিল।’ স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমারের সাবেক জান্তা সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনও।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলেও দেশের শাসন ব্যবস্থায় সহসাই বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না সু চি। কেননা, বিগত জান্তা সরকার এমনভাবে সংবিধান প্রণয়ন করে গেছে, যাতে যে কোনো সরকারকেই সামরিক বাহিনীর কাছে কার্যত জিম্মি হয়ে থাকতে হবে। পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। আবার সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টে যে কোনো প্রস্তাব পাস হতে তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সম্মতি না থাকলে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সু চির সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। সাংবিধানিক বাধার কারণে তার পক্ষে প্রেসিডেন্টও হওয়া সম্ভব নয়। এই বাধা কাটানোও তার সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। তার পরও আশাবাদী মিয়ানমারের জনগণ। তেমন একজন ৩০ বছর বয়সী টিন টুন অং। তিনি বলেন, ‘সামরিক শাসনে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। মা সু চি পরিবর্তন আনবেন। এটা আজ রাত থেকেই শুরু হবে।’ তার আশা, সু চি দেশকে দারিদ্র্যের রাহুগ্রাস থেকে বের করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেবেন।

দীর্ঘ পাঁচ দশক সেনাশাসনের বেড়াজালে বন্দি মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য এ নির্বাচন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে ২৫ বছরের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে প্রথম নির্বাচনও এটি। রোববার দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পার্লামেন্ট এবং আঞ্চলিক আইন পরিষদগুলোর এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮০ শতাংশের বেশি। গতকাল সকাল থেকে এক-এক করে বিভিন্ন আসনের ফল প্রকাশ করা শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এতে রাত পর্যন্ত ঘোষিত ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৪টিই পেয়েছে এনএলডি। তবে বিবিসির এক টুইটে জানিয়েছে, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে ১১৯ আসনের মধ্যে ১১৬টি পেয়েছে এনএলডি। এর মধ্যে নিম্নকক্ষে ৮৩টির মধ্যে ৮১ আসন ও উচ্চ কক্ষে ৩৬টির মধ্যে ৩৫ আসন পেয়েছে। গতকাল মূলত বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের আসনগুলোরই ফল প্রকাশ করা হয়। আঞ্চলিক আইন পরিষদগুলোয়ও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে দলটি।

গতকাল এনএলডির মুখপাত্র উইন তেইন বলেন, ‘এনএলডি ৭০ শতাংশের বেশি আসন পাবে।’ তার দাবি, মোট ভোটের ৮০ শতাংশই পাবে তার দল। সরকার গঠন করতে দলটির প্রয়োজন ৬৭ শতাংশ আসন। ৪৪০ আসনের নিম্নকক্ষে ১১০টি এবং ২২৮ আসনের উচ্চকক্ষে ৫৬টি সেনাসদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। রোববার সংরক্ষিতগুলো ছাড়া বাকি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।