খালেদার কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে- কোরামিন কমিটি নিয়ে তৃণমূলে বিক্ষুদ্ধ অবস্থা
প্রিয়া রহমান : বিএনপি বাঁচাতে ৫১ সদস্যর কোরামিন কমিটি নিয়ে ক্ষুদ্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা।ইতিমধ্যে টিমপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিকদের কর্মী সভার তারিখ অবহিত করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজনকে টিমপ্রধান করা হয়। এতে বাকিরা ক্ষুব্ধ হয়েছে । জনপ্রিয় এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদকরা পুরো বিভাগের কর্মী সভাগুলো সমন্বয় করে থাকেন। কিন্তু কয়েকজনকে টিম প্রধান করা হলে আমরা কি দোষ করেছি।
এমন অবস্থা প্রায় সর্বত্র। বলা হচ্ছে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয়রা কিভাবে গতি ফেরাবেন ? ইতিমধ্যে বিএনপি বাঁচাতে গিয়ে কোন্দল আরো বেড়েছে। জানা গেছে, তৃণমূলকে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপির ৫১ টিমপ্রধানের অনেককে নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে এসব নেতার বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয় এবং গ্রেফতার এড়াতে ছিলেন আত্মগোপনে।
কেউ কেউ জাতীয় রাজনীতিতে ততটা পরিচিতও নন। তৃণমূলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকে বছরের পর বছর এলাকায় যান না। তৃণমূলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও তেমনটা নেই। বিগত আন্দোলনে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় এসব নেতা কিভাবে গতি ফেরাবেন- এমন প্রশ্ন নেতাকর্মীদের।
টিম গঠনের ব্যাপারে দলের বিভিন্ন স্তরের কয়েক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যিনি একটি জেলার সভাপতি, তিনিও একটি টিমের প্রধান হয়েছেন। নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিতদের দিয়ে তদারকি তৃণমূল মেনে নিবে কিনা- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এক নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ভুল বার্তা দিয়ে দলের একটি অংশ ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলে তৃণমূল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে।
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে তৃণমূল সব সময় সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ। সরকারবিরোধী দুটি আন্দোলনেও তার প্রমাণ দিয়েছে। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তৃণমূলের সামর্থ্য দেখা গেছে। আন্দোলন ব্যর্থতার জন্য বারবার কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্দোলনের সফলতা ও নির্বাচনে ইতিবাচক ফলের জন্য কেন্দ্রকে ঐক্যবদ্ধ এবং সক্রিয় করতে বিভিন্ন মহল থেকে তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা এক টেবিলে বসতে পারেননি। গুটিকয়েক নেতা ছাড়া বেশির ভাগ দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত। দলের কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত।
উল্টো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও আধিপত্য বিস্তারে সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের কোন্দলের ঢেউ এসে পড়েছে তৃণমূলেও। তাই তৃণমূলে আসার আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্র ঐক্যবদ্ধ আছে এমন একটি বার্তা তৃণমূল পেলে তা দলের জন্য ইতিবাচক হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল পুনর্গঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে গতি আসবে বলে আমরা মনে করি। বর্তমান রাজনীতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে, যা ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে।
নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত এবং জেলার সভাপতিকে টিম প্রধান করায় সফরের উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলের এই প্রভাবশালী নেতা।
টিমপ্রধানদের অনেককেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমানকে কুষ্টিয়া জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটি জেলার সভাপতিকে কি করে আরেকটি জেলার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হল। আবার বেশ কিছু টিম প্রধান একাধারে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও জেলার সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মী সভার তারিখ নির্ধারণ করতে টিম প্রধানদের দলের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক জেলার সভাপতি টিমপ্রধান হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার কর্মী সভা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে তাদের। নিজ জেলায় যথেষ্ট সময় দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সভাপতির অনুপস্থিতিতে জেলার কর্মী সভা কতটা সফল হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ এসব জেলায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও বেশ প্রকট।
এমন অনেককে টিমপ্রধান করা হয়েছে যারা দীর্ঘ সময় তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার অনেককে তৃণমূলের নেতারা ঠিকমতো চেনেনও না। নেতাকর্মীদের মধ্যে ততটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। অথচ তাদের গুরুত্বপূর্ণ জেলার দায়িত্বে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাম ঘরানার দু’জন বিএনপিতে যোগ দিলেও তাদের দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জেলার দায়িত্বে।
বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা নেই তারা কিভাবে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করবেন খোদ ওই জেলার নেতারাই এমন প্রশ্ন করেন। সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে এমন একজনকেও টিম প্রধান করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নয়, বুদ্ধিজীবী হিসেবে দলে পরিচিত এমন নেতাও হয়েছেন টিমপ্রধান।
জানা গেছে, টিমপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিকদের কর্মী সভার তারিখ অবহিত করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজনকে টিমপ্রধান করা হয়। এতে বাকিরা ক্ষুব্ধ। এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদকরা পুরো বিভাগের কর্মী সভাগুলো সমন্বয় করে থাকেন। কিন্তু কয়েকজনকে টিম প্রধান করা হলে আমরা কি দোষ করেছি।
জানা গেছে, ২২ এপ্রিল থেকে ৭ মের মধ্যে এ সফর শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো টিম জেলা সফরে বের হয়নি। বাকি কয়েকদিনের মধ্যে কিভাবে তারা এ সফর শেষ করবেন তা বোধগম্য নয়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আসল কাজ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
নরসিংদী জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তৃণমূল হল আমাদের ভিত্তি। তাই আন্দোলন এবং নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের ঐক্য ও শক্তির বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, তৃণমূলে যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিদেরই সাধারণত এসব দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এবারের কমিটিতে নিষ্ক্রিয় ও তৃণমূল বিচ্ছিন্ন অনেককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খোকন বলেন, এমনটা যদি হয়ে থাকে তাহলে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড তা ভালো বলতে পারবেন।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, তৃণমূলের ওপরই বারবার এ এক্সপেরিমেন্ট কেন। বিগত আন্দোলনে আমরা সক্রিয় কিনা তার প্রমাণ দিয়েছি। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বারবার কেন্দ্রকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানানো হলেও সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।