ক্ষুদ্ধ রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছে- দুর্নীতিগ্রস্ত রাজউক ঢাকাকে জঞ্জালে পরিণত করেছে
স্টাফ রিপোর্টার : বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে প্রাণঘাতি অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে একের পর এক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন। বিনা নোটিসে রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে হানা দিয়ে অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে ক্ষোভও ঝেরেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।
এসব অভিযান বন্ধ করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনের এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি।গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যায়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু আট তলা ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান।
ভবনে ছিল না কোনো ফায়ার একজিট। একমাত্র সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারসহ রেস্তোরাঁর মালামাল। কাচে ঘেরা ভবনের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে নামতে না পেরে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অধিকাংশের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে। সমালোচনার মুখে রোববার থেকে রাজধানীতে যে যার মত করে অভিযানে নামে রাজউক, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র্যাব।
আবাসিক ভবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে বানানো রোস্তরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এসব অভিযানে, আবার কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হচ্ছে।৫ মার্চও সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছিল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ইমরান হাসান বলেন, আমাদের এ পর্যন্ত আটশর বেশি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে, এর মধ্যে সরকারিভাবে ২৬০টির মতো বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অভিযান চলছে।
ডিপিডিসি থেকে আমাদেরকে বলছে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে, যদি আমরা রাজউকের ছাড়পত্র না দিই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি অব্যবস্থাপনার দায় কেন রেস্তোরাঁ মালিকরা নিবে? কেন সিস্টেমটা এমন করে রাখা হয়েছে, যাতে আমাদের প্রতিবন্ধকতা ফেইস করতে হবে প্রত্যেক পদে-পদে?
তিনি বলেন, শুধু এই সেক্টর না, আমরা মনে করি যেকোনো সেক্টরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাজ করে। যারা ব্যবসায়ী তারা এই প্রতিবন্ধকতা ফেইস করেই ব্যবসাটাকে এই জায়াগায় নিয়ে এসেছে। আমাদের দাবি, এই অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য। রাষ্ট্রযন্ত্র এইভাবে নিষ্পেষিত করতে পারে না কোনো একটা সেক্টরকে।
ইমরান হাসান বলেন, অনেকে ভয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে। ইমারত বিধির ১৯৫২ সালের একটা আইন আছে, আপনি ভবনের অনুমতি নিয়ে যদি সেটা ইউজ না করেন সেক্ষেত্রেও আপনাকে একটা ১২ মাসের নোটিস দেয়া উচিত, কিন্তু এখানে ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ আমি বলব, রেস্তোরাঁ ভাঙচুর এবং সিলগালা করে দিয়েছে, কোনো পেপার্সও দেয়া হয়নি আমাদেরকে, যে এই কারণে সিলগালা করে দেয়া হলো।
এরপর রাজউককে একহাত নিয়ে ইমরান বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজউক। তাদের ব্যর্থতার জন্য আজকে সারা ঢাকা শহর জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এদের নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। তাদের প্রত্যেকটি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত।
ইমরান বলেন, “রাজউকের এফ-১ ও এফ-২ এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ আমরা জানি কমার্শিয়াল স্পেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ড্যাবের মাস্টারপ্ল্যানেও ব্যবসায়ীদেরকে ভবন মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
রাজউক যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল সেভাবে যদি ভবনটি ব্যবহার না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ মাসের সময় দিয়ে নোটিস প্রদান করতে হবে ভবন মালিককে বা ব্যবহারকারী বা রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে। কিন্তু রাজউক বর্তমানে যা করছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
রেস্তোরাঁ খাতের সামগ্রিক সংকট নিরসনে বিষেশজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের আহ্ববান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা টাস্কফোর্সের কথা বলেছি, তারা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অতিঝুকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করুক। বন্ধ করে দেয়া কোনো সলিউওশন না।”
ইমরান হাসান বলেন, রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করুন। অন্যথায় আগামী বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করব। তাও দাবি মানা না হলে একদিনের জন্য সারা বাংলাদেশে রেস্তোরাঁসমূহ বন্ধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনী, সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।